× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ওয়াসার পানি শোধনাগার

আগের দুটোর খবর নেই, নতুন প্রকল্পে তোড়জোড়

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০০:১১ এএম

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০৯ এএম

ওয়াসা ভবন। ছবি : সংগৃহীত

ওয়াসা ভবন। ছবি : সংগৃহীত

ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দুটি পানি শোধনাগার নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় ঢাকা ওয়াসা। ৫ বছরের কাজ ১০ বছরে শেষ না হলেও প্রকল্প দুটির ব্যয় বেড়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে আরও একটি পানি শোধনাগার নির্মাণের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে, গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-২)।

প্রস্তাবিত ডিপিপি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। আর বাকি ৭ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ খোঁজা হচ্ছে। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কাজ শুরু করে জুন ২০২৯ সালের মধ্যে ৫ বছরে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সরবরাহ বাড়াতে মেঘনা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় আনার জন্যই এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। 

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার নেওয়া প্রায় সব প্রকল্পই কচ্ছপগতিতে চলছে। তবে ব্যয় বাড়ছে ঘোড়ার গতিতে। নারায়ণগঞ্জের গন্ধর্বপুরে বর্তমানে একটি পানি শোধনাগার প্রকল্প রয়েছে। যেটির মেয়াদ ছিল ছয় বছর। কিন্তু ১১ বছর হলেও সেটার কাজ শেষ হয়নি। সায়েদাবাদেও একটি পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হচ্ছে, এটির মেয়াদ ছিল ৫ বছর। কিন্তু ১০ বছর পার হলেও এটির পাঁচ শতাংশও কাজ হয়নি। এখন নতুন আরেকটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ওপর একটি পর্যালোচনা সভা হবে। সেখানে প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সভায় প্রকল্পটি সুপারিশপাপ্ত হলে প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ খুঁজতে সেটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হবে। ঋণের সম্পত্তি পেলে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর্যায়ে যাবে। 

এই প্রকল্প নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো আর ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে পানি সরবরাহ বাড়ানো। জানা গেছে, ঢাকায় দৈনিক পানির চাহিদা ২৬০ কোটি লিটার। এর মধ্যে ৯৩ কোটি লিটার বা ৩৫ শতাংশ পানি ওয়াসার পাঁচটি ভূ-উপরিস্থ পানির শোধনাগার থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর বাকি ৬৫ শতাংশ পানি ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার উত্পাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং প্রায় ৩৬ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। যার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ৫০ কোটি লিটার নিরাপদ খাবার পানি ঢাকা শহরে সরবরাহ করা হবে।

প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, মেঘনা নদীর অপরিশোধিত পানি পরিশোধনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের গন্ধর্বপুরে ৫০ কোটি লিটার ক্ষমতার একটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা। এই প্রকল্পের অধীনে ফেজ-১ এর অনুরূপ একটি ইনটেক ওয়াটার পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে আড়াইহাজারের বিষনন্দীতে মেঘনা নদীর তীরে। প্রায় ২২ কিলোমিটারের অপরিশোধিত পানি ট্রান্সমিশন পাইপলাইন এবং এটি ফেজ-১ এর ট্রান্সমিশন পাইপলাইন করিডোর বরাবর ১৬০০ মিমি ব্যাসের ডুয়েল পাইপলাইন হবে। এরপর ফেজ-১ গন্ধর্বপুরের পাশে ৫০ কোটি লিটার ক্ষমতার ডব্লিউটিপি নির্মাণ করা হবে। এরপর শহরের চাহিদা মেটাতে ১৬০০ মিলিমিটার ব্যাসের ডুয়েল ট্রান্সমিশন পাইপলাইনের মাধ্যমে এই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পরিশোধিত পানি ঢাকা শহরের কাছে একটি ইনজেকশন পয়েন্টে পাঠানো হবে। পরিশোধিত জল পরিবহন পাইপলাইনের আনুমানিক দৈর্ঘ্য হবে ১৪ কিলোমিটার।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার দুটি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণের প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-৩) এবং গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প। এই দুটি চালু হলে ৯৫ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ বাড়বে। এ ছাড়া নতুন যে গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প (ফেজ-২) নেওয়া হচ্ছে, এতে আরও ৫০ কোটি লিটার ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ বাড়বে বলে জানিয়েছে ওয়াসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা ওয়াসার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা ৩৫ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশে পৌঁছবে। ৫টি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার থেকে ৯৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে সায়েদাবাদ ও গন্ধর্বপুরে দুটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আমরা ভূগর্ভস্থ পানির উত্স থেকে সরে আসতে চাই।’

জানা গেছে, চলমান প্রকল্প দুটি নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন হলে বর্তমানে ৫০ শতাংশের বেশি ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ করতে পারত ওয়াসা। প্রকল্পগুলো ৯ থেকে ১০ বছর ধরে চলছে। এই সায়েদাবাদ ও গন্ধর্বপুরের প্রকল্প দুটি থেকে ৯৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ২০২০ সালে চালু হওয়া পদ্মা পানি শোধনাগার থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এখনও পানি সরবরাহ হচ্ছে না। এই শোধনাগার থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৩০ থেকে ৩২ কোটি লিটার দৈনিক পানি সরবরাহ হচ্ছে। সেটা হলে ভূ-উপরিস্থ পানি সরবরাহ বাড়ত।

ঢাকা ওয়াসার পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগারের উদ্বোধন হয় ৪ বছর আগে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পদ্মা নদীর পানি পরিশোধন করে ঢাকায় সরবরাহ করা। ভূগর্ভস্থ পানির উৎসের ওপর চাপ কমাতে ৩ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা খরচ করে ওয়াসা এই পানি পরিশোধনাগার নির্মাণ করে। কিন্তু এখনও এ প্রকল্পের মূল সেবা লাইনগুলো বসাতে সক্ষম হয়নি ওয়াসা। তাই সক্ষমতা অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে পারছে না এই পরিশোধনাগার। এর সক্ষমতা দিনে ৪৫ কোটি লিটার হলেও ওয়াসা কাগজেকলমে উত্পাদনের পরিমাণ দেখাচ্ছে ৩০-৩২ কোটি লিটারের মতো।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের (ফেজ-৩) মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। আরও পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও প্রকল্পের অগ্রগতি ৫ শতাংশেরও কম। কাজের অগ্রগতি না থাকলেও প্রকল্পের খরচ বেড়ে গেছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। এই চিত্র ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্পের (ফেজ-৩)। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের পানির উত্স মেঘনা নদীর দূষণ নিয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার টানাপড়েনসহ একাধিক কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নতুন ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। সংশোধিত মেয়াদেরও আর মাত্র ১১ মাস বাকি। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি মাত্র ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এদিকে ধীরগতি থাকলেও কাজ এগিয়েছে মেঘনা নদীর পানি শোধনের জন্য নেওয়া গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়। সংশোধিত প্রকল্পে ২ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তীকালে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। তবে বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে এখনই সংশয় তৈরি হয়েছে। ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

গন্ধর্বপুর পানি শোধনাগার প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের মেঘনা নদীর বিষনন্দী পয়েন্ট থেকে পানি আনা হবে সিদ্ধিরগঞ্জের গন্ধর্বপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শোধনাগারে। সেখানে পানি শোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে তা রাজধানীর বাসায় সরবরাহ করা হবে। দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি আসার কথা এ প্রকল্প থেকে। বারিধারা থেকে রামপুরা এবং বারিধারা থেকে এয়ারপোর্ট রোড, উত্তরা, গুলশান, বনানী ও কচুক্ষেত এলাকায় পানি সরবরাহে ২৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। গন্ধর্বপুরে পানি শোধনাগারের পরিশোধিত পানি রাজধানীতে আনতে ঢাকার বারিধারা-ভাটারা ট্রান্সমিশন লাইন নির্মাণ করা হবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা