প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৩ পিএম
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি)। নতুন এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন দেশ চালু করেছে সরকারি প্রণোদনা। এমনই এক দেশ আফ্রিকার রুয়ান্ডা। দেশের আমদানি ব্যয়ের ৪০ শতাংশ অর্থ গাড়ি কিনতেই খরচ করে দারিদ্রসীমার থাকা দেশটি। তবে এবার বৈদ্যুতিক গাড়ি, খুচরা যন্ত্রাংশ, ব্যাটারি এবং চার্জিং স্টেশনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক মওকুফ করেছে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজার পাহাড়ের দেশ হিসেবে পরিচিত রুয়ান্ডা বৈদ্যুতিক যানবাহন চালুর যোগ্য স্থান নাও হতে পারে। কারণ এই গাড়িগুলোতে ভারী ব্যাটারি চারপাশে লেগে থাকে। এবড়োখেবড়ো গ্রামীণ রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ি পক্ষে চলাচল করা কঠিন। তবে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে ক্ষুদ্র, স্থলবেষ্টিত দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে চান। ইতোমধ্যেই বৈদ্যুতিকযানকে জনপ্রিয় করতে ভর্তুকি দিচ্ছে দেশটি। এমনকি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্যও ভাড়ামুক্ত জমি দিচ্ছে রুয়ান্ডা সরকার।
এদিকে ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিকযান চালুর জন্য রুয়ান্ডার সরকারের কাছে প্রথম প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কভিড মহামারী কারণে তা আটকে যায়। তবে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে প্রণোদনাগুলো কার্যকর হয়। জার্মানির ভক্সওয়াগেন ছিল সরকারী সুবিধা প্রাপ্ত প্রথম প্রতিষ্ঠান। এটি ২০১৯ সালে রুয়ান্ডায় ই-গল্ফ মডেল চালু করে৷ প্রতিষ্ঠানটির পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজধানী কিগালিতে চারটি গাড়ি এবং দুটি চার্জিং স্টেশন চালু করা হয়। ভক্সওয়াগেনের মূল পরিকল্পনা ছিল ৫০টি গাড়ি এবং ১৫টি চার্জিং স্টেশন চালু করে ক্যাব-হেলিং অ্যাপের মাধ্যমে পরিষেবা চালানো। তবে তিন বছর পরে এসে তাদের ২০টি গাড়ি রাস্তায় রয়েছে। যদিও বর্তমানে এগুলোকে রাইড-হেলিং অ্যাপ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উচ্চমানের হোটেল, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কিগালি কনভেনশন সেন্টার থেকে যাত্রীদের আনা-নেওয়া করতে এখন এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।
রুয়ান্ডার মতো একটি আফ্রিকান দেশে নতুন এই কার্যক্রম কতটা চ্যালেঞ্জ ছিল তা জানান ভক্সওয়াগেন মোবিলিটি সলিউশন রুয়ান্ডার অপারেশন প্রধান অ্যালান কোয়ালি। তিনি বলেন, "রাস্তার অবকাঠামোর অসমতা এবং গতিরোধক বাম্পের উচ্চতা ই-গল্ফের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং হয়ে ছিল। এই গাড়ি গুলোতে যেহেতু ব্যাটারি নিচের অংশে থাকে তাই অপরিকল্পিত বাম্পের কারণে গাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভবনা ছিল। তবে আমরা রুয়ান্ডা সম্পর্কে আশাবাদী। দেশটি আইডি-৪ বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানির পরিকল্পনা নিয়েছে। এই গাড়ি গুলোর উচ্চতর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স রয়েছে ফলে সামনে আর সমস্যা থাকবে না।"
দারিদ্রসীমার নিচে থাকা দেশটিতে নিজের কাজ দেখানোর সুযোগ আছে উল্লেখ করে মিঃ কোয়ালি আরও বলেন, "গাড়ি প্রস্তুতকারকদের একটি বড় সমস্যা হল কিগালির বাইরে চার্জিং সুবিধার অভাব। তবে রুয়ান্ডার সৌন্দর্য হল সরকার একটি পরীক্ষামূলক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যার মাধ্যমে আপনি আফ্রিকান সেটআপে কাজ প্রমাণ করতে পারবেন।"
রুয়ান্ডার মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে বিশাল পরিসরে চার্জিং অবকাঠামোতে ভর্তুকি দেওয়া কঠিন। তবুও সরকার এবং জ্বালানী সংস্থাগুলোর যৌথ অংশীদারিত্বে রুয়ান্ডার বৈদ্যুতিকযান চার্জিং নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী দুই বছরে সারা দেশে ২০০টি পাবলিক চার্জিং স্টেশন তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছ৷ ৩৫টি স্টেশন বৈদ্যুতিক গাড়িকে সম্পূর্ণভাবে সার্ভিস দেবে। অন্যগুলো বৈদ্যুতিক মোটরবাইককে সার্ভিস দেবে।
এদিকে গত কয়েক মাসে রুয়ান্ডায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশ। তবে জ্বালানি তেলের খরচের অর্ধেক ব্যয় হয় ব্যাটারিচালিত গাড়িতে ফলে এদিকেই ঝুঁকছে জনগণ বলে মন্তব্য করেছেন রুয়ান্ডায় মিত্সুবিশির অফিসিয়াল ডিলার জোশুয়া নুশুটি। তিনি বলেন, "ইতোমধ্যেই রুয়ান্ডা নবায়নযোগ্য উৎস থেকে তার ৫৩ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। জ্বালানি থেকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তর করার জন্য এটি ভাল অবস্থানে রয়েছে। নবায়নযোগ্য এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সংস্থানগুলোতে বিনিয়োগ এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার গ্রিনহাউস হ্রাস করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত হতে পারে।"