প্রবা প্রতিবেদক ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৬ এএম
ফাইল ফটো
অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, দেশের সব তৈরি পোশাক শিল্প কারখানা আগামীকাল (আজ) খোলা থাকবে। কোনো কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হলে বিশেষ ব্যবস্থা নেবে সরকার। দেশের অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে কেউ যদি কারখানা বন্ধ রাখার অপচেষ্টা করে, সেটাও মনে রাখা হবে। আর তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, যে কারখানায় অসন্তোষ দেখা দেবে, শ্রম আইন অনুযায়ী সেটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে এক মতবিনিময় সভা শেষে এসব কথা জানানো হয়। তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান সংকট ও উত্তরণের পথ নিয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিজিএমইএ। সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঢাকার আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে গতকাল কোথাও কোনো কারখানায় অস্থিরতা দেখা যায়নি। সড়ক অবরোধসহ কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেনি। দুই সপ্তাহ ধরে চলা শ্রমিক অসন্তোষের জেরে বন্ধ হওয়া ২১৯ কারখানার অধিকাংশই খুলে দেওয়ার পর সেগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে এখনও বন্ধ রয়েছে ৫২টি কারখানা। এর মধ্যে ৩৯টি শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ১৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ২টার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর এসপি সারোয়ার আলম।
মতবিনিময়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে সরকার কমিটি করেছে। এই কমিটির মাধ্যমে সবার সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার যে সংস্কৃতি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তা ফিরিয়ে আনতে হবে।
শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হওয়ায় অনেকের মতো শ্রমিকেরাও নিজেদের কথা বলছেন। শ্রমিকদের অভিযোগ সমাধানে শ্রম-সংক্রান্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে শ্রমিকের আন্দোলনে একদমই যে ষড়যন্ত্র নেই, এমনও নয়। শ্রম আইনের মধ্য থেকে ট্রেড ইউনিয়ন করার যতটা সুযোগ আছে, তা নিশ্চিত করবে সরকার। এসব প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে যারা অস্থিরতা করবে, তাদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রবিবার কারখানা চালু রাখা হবে। তখন যদি কোনো কারখানায় হামলা, ভাঙচুর হয়, শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিলে আশুলিয়ার কারখানা মালিকেরা কারখানা বন্ধ করে দেবেন।’ এ সময় নিট পোশাক কারখানা মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই ঘোষণাকে সমর্থন দিলাম। ভাঙচুর হলে আশুলিয়ার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও শিল্প পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কারখানা ভাঙচুর ও কারখানা কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগ এনে ২০ শ্রমিকের নামে মামলার প্রতিবাদে জামগড়া এলাকায় মদিনাপেল ফ্যাশন ক্রাফট লিমিটেডের শ্রমিকরা কারখানার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। আয়োজিত মানববন্ধন থেকে শ্রমিকরা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর এসপি সারোয়ার আলম বলেন, শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কারখানা রয়েছে ১ হাজার ৮৬৩টি। এর মধ্য অধিকাংশই তৈরি পোশাক কারখানা। কয়েকদিনের চেয়ে আজ (গতকাল) শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে দাবিদাওয়া নিয়ে সুরাহা না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৯টি কারখানা বন্ধ আছে। এছাড়া ১৩টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এসবের মধ্যে অধিকাংশই পোশাক কারখানা। দুয়েকটি কেবল ওষুধ ও জুতা তৈরির কারখানা।