সাভার ও আশুলিয়া (ঢাকা) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:১৯ পিএম
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০৩ পিএম
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে পুলিশি নিরাপত্তায় শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। প্রবা ফটো
ঢাকার শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় টানা কয়েক দিন শ্রমিক অসন্তোষের পর কাজে ফিরতে শুরু করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নির্দিষ্ট সময়ে আশুলিয়ার নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জামগড়া, ডিইপিজেড, পলাশবাড়ীসহ বিভিন্ন কারখানায় শুরু হয়েছে কর্মচাঞ্চল্য। তবে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরবেন না। এমন পরিস্থিতিতে ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত কয়েক দিনে যেসব এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে, সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত কারখানাসংলগ্ন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কে ও কারখানার সামনে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা টহল দিচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেডের সামনে মোতায়েন রয়েছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। এ ছাড়া আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় বিভিন্ন কারখানার সামনে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। সড়কে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ জানায়, শনিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে কাজে যোগ দেন বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকেরা। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কাজ বন্ধ রেখে তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করবেন না বলে কারখানা কর্তৃপক্ষকে জানান। পরে ওই কারখানাগুলো ছুটি দেয় কর্তৃপক্ষ। ছুটির বিষয়টি জানাজানি হলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘সকালে কারখানাগুলোয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল। তবে পরে কিছু কারখানায় মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের বনিবনা না হওয়া ও দাবি পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকেরা কাজ করেননি। পরে সেগুলো ছুটি দেওয়া হয়। কয়েকটি কারখানায় কর্মকর্তারা অনুপস্থিত থাকায় শ্রমিকেরা কাজ না করে বের হয়ে যান। আশপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা শ্রমিক ছুটির বিষয়টি জানার পর তারাও কারখানা ছুটি দিয়েছেন।’
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৭টি কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ কারখানার সামনে অবস্থানরত সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।’
শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে শ্রমিক দলের সমাবেশে সংঘর্ষ
এদিকে শিল্পাঞ্চলে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিরসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আশুলিয়া শাখার আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল উত্তরবঙ্গগামী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আহতদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম খান নামের একজন নিজেকে ধামসোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেছেন। বাকি আহতদের পরিচয় তাতক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বিকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আশুলিয়া থানা ইউনিটের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শুরুতেই ট্রাকের অস্থায়ী স্টেজে ওঠাকে কেন্দ্র করে প্রথমে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। পরে মাজহারুল ইসলাম খানকে স্টেজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে এক গ্রুপ এসে তাকে পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হয়।
এ ব্যাপারে মাজহারুল ইসলাম খান বলেন, ‘শ্রমিক দলের আয়োজনে একটি শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আমি ধামসোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক। আমাকে স্টেজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। গফুর চেয়ারম্যান ও মোখলেস খানের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। আমিও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি।’
সংঘর্ষের ব্যাপারে আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি প্রোগ্রামে আছেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আশুলিয়া থানা শাখার সভাপতি জায়েদ আলী বলেন, সে আমাদের ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে ছিল। কিন্ত কিছুদিন আগে দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। আজকে অনুষ্ঠানে সে স্টেজে এসে নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। তাকে বারবার সতর্ক করা হলেও সে নামেনি। তাই তাকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মারধর করা হয়নি।
শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ১৭ জনকে আটক করে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়।