× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সংকট কাটাতে নজর বিদেশি সহায়তায়

আরমান হেকিম

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৯ এএম

আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৪ ১০:৪৩ এএম

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

গ্রাফিক্স : প্রতিদিনের বাংলাদেশ

বিগত কয়েক বছরের মতো ডলার ও রিজার্ভ সংকট কাটাতে ও বাজেটের অর্থ সংস্থানের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে দর-কষাকষি চলছে। চলতি অর্থবছরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যাশা ১৩০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা। 

সূত্র বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থ বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে অনেকেই প্রাথমিক আশ্বাস দিয়েছে।

ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পেতে আলোচনা অব্যাহত আছে। আমরা বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ৪০ কোটি ডলার, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছে ২০ কোটি ডলার এবং কোরিয়ার কাছে ১০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছি। এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। এ ছাড়া জাপানের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছে, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়নি। তাদের কাছে ১০ কোটি ডলার প্রত্যাশা করছি। 

ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাজেট সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়। এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল অর্থ মেলে। মোটা দাগে সব সংস্থার শর্ত প্রায় একই রকম। অন্যতম শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব ও ব্যাংক খাতসহ আর্থিক খাতের সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনি সংস্কার, ভর্তুকি ও কর ছাড় কমানো এবং বিভিন্ন খাতে বড় ধরনের সংস্কার করা।

অর্থ বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ঋণ পরিশোধে সব সময় ভালো করেছি। এজন্য আমাদের প্রস্তাবের বিপরীতে তাদের কাছ থেকে প্রাথমিক আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখনও বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে তা চূড়ান্ত করা হবে। আমরা ১৩০ কোটি ডলার প্রত্যাশা করছি, তবে চূড়ান্ত অর্থের পরিমাণ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’

ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে বাজেট সহায়তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২০ কোটি ডলার। পরবর্তী সময়ে রিজার্ভ পরিস্থিতি বিবেচনায় সহায়তার পরিমাণ বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার করা হয়েছিল। অর্থাৎ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজেট সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে পারে সরকার। 

অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আরও ঋণ সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। এটি কাটিয়ে উঠতে ঋণের প্রয়োজন। বকেয়া ঋণ মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ডলার কেনা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছে আরও এক বিলিয়ন ডলার করে চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে আরও তিন বিলিয়ন ডলার পেতে আলোচনা চলছে বলে জানান গভর্নর। ইতোমধ্যে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতির তিন কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। 

গেল সপ্তাহে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির। সাক্ষাৎ শেষে সালেহ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় অংশীদার। তারা এত দিন মূলত প্রকল্প সহায়তা দিয়েছে। এবার তাদের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। জাপান এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে।’

ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৩১২ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজেট সহায়তা পাওয়া যায় ২০২১-২২ অর্থবছরে। তখন মূলত করোনা মহামারি পরবর্তী টিকা কেনা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বাজেট সহায়তার পরিমাণ বেড়েছিল। 

ইআরডির বছরওয়ারি তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার বাজেট সহায়তা পেয়েছিল ১০০ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল ২০০ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এটি ছিল এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে বড় বাজেট সহায়তা। এরপর ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট সহায়তা এসিছিল ১০০ কোটি ৯ হাজার ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। 

বাজেট সহায়তা ছাড়াও বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ নেওয়া হয়। ইআরডির তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতি মাসে গড়ে বিদেশি ঋণদাতাদের কাছে ৪ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনের হিসাবে এই ঋণের পরিমাণ ১৬১ কোটি টাকারও বেশি। যার মোট পরিমাণ ৮ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণ নেওয়ার কারণে দেশের অর্থনীতি আরও চাপে পড়ে। পাশাপাশি অর্থ পাচার, হুন্ডির কারণে দেশে ডলার সংকট আরও প্রকোট হয়ে ওঠে। 

রেকর্ড থেকে রিজার্ভ রেড লাইনে চলে আসে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনা বিধিনিষেধের মধ্যে আমদানি ব্যয়, আন্তর্জাতিক ভ্রমণ ও বিদেশি মুদ্রার আয় কমে যায়। কিন্তু প্রবাসী আয় বৃদ্ধির কারণে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ রেকর্ড ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে। রেকর্ড রিজার্ভকে সরকার সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।

রিজার্ভের ডলার দিয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিএফ) গঠন করে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কাকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণও দেওয়া হয়। যেই ঋণ পাওয়া নিয়ে একসময় সংশয় দেখা যায়। যদিও দেউলিয়া থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করে শ্রীলঙ্কা। তবে এটি ছিল আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। অর্থনীতিবিদরা এসব বিষয়ে বারবার সতর্ক করলেও তাদের কথা শোনা হয়নি। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ মুদ্রানীতি ও ডলারের দর বাজারভিত্তিক করে না দেওয়ার ফলে রিজার্ভ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এখন বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ ১৩ বিলিয়নের আশেপাশে রয়েছে বলে জানা গেছে। 

বাজেট সহায়তা নির্ভরতা বাড়ার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদদের অনেকের মতে, বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক বাজেট প্রণয়ন করতেন। দেশের কর জিডিপি রেশিও বাড়ানোতে মনোযোগ না দিয়ে সরকার বাজেটের আকার বাড়াতে বেশি আগ্রহী ছিলেন। যার ফলে প্রতি বছর কয়েক লাখ টাকার ঘাটতি বাজেট করতে হতো। কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের অর্থ না থাকার কারণে সরকারকে বিদেশনির্ভর হয়ে পড়তে হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর বাজেটের ঘাটতি মেটাতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বাজেট সহায়তা নিতে হয়েছে সরকারকে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা