প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ২০:৪০ পিএম
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৪ ২০:৪২ পিএম
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ জামিনুর রহমান ও তার সহযোগীদের পদত্যাগ দাবি করছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের বিরুদ্ধে নিয়োগবাণিজ্য, দুর্নীতি, হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে। রবিবার (১৮ আগষ্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ দাবি তোলেন।
তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট হয়ে ব্যাংকে অধিপত্য বিস্তার, নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া জামিনুর রহমান। স্বাধীন নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
জামিনুর রহমানের নানা অপকর্মের সহযোগীরা হলেন, সিস্টেম এনালিস্ট আল্লামা মো. ইয়াহইয়া তানহার ও সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. শাহেদ আলমগীর। তাদেরও পদত্যাগ ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আতিকুল ইসলাম বলেন, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অপ্রয়োজনীয় কাজ করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক। হয়রানিমূলক বদলি, অর্থের বিনিময়ে পদন্নোতি, টাকার বিনিময়ে অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তি মওকুফসহ নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দলোন চালিয়ে যাওয়ার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে না আাসা পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া গত ১৫ আগস্ট তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচীতে হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করা হয়েছে দাবি করে এর বিচার চেয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শেখ মো. জামিনুর রহমান ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এমডি পদে চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। গত ৭ এপ্রিল প্রথম দফা মেয়াদ শেষে তাঁকে আবার দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’-এর যাত্রা শুরু হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এর কার্যক্রম আবার শুরু হয়। প্রকল্পটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ২০১৪ সালে আলাদা আইনের মাধ্যমে গঠিত হয় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। সারাদেশে ৪৯৫টি শাখা রয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি (বিএসসি) সচিবালয়ের মাধ্যমে অল্পসংখ্যক সিনিয়র অফিসার, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও প্রিন্সিপাল অফিসার পদে নিয়োগ হয়েছে। বেশিরভাগ নিয়োগ, পদায়ন, পদোন্নতি হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ব্যাংকের আইসিটি বিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্ট ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের ঘনিষ্ঠ আল্লামা ইয়াহিয়া তানহা এমডির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বিভিন্নভাবে কর্মীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতেন। তার মাধ্যমেই বিভিন্ন কেনাকাটায় দুর্নীতি এবং নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়মের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে ৭২ জন নিরাপত্তারক্ষী ও ৪৯২ জন অফিস সহায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকার বদলের পর অবিলম্বে তাঁকে বদলির দাবি জানানো হলে বিক্ষোভ দমনের নামে এমডি ভুল বার্তা দিয়ে সারাদেশ থেকে চার হাজারের মতো লোক ঢাকায় জড়ো করেছেন। একই সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার প্রধান কার্যালয়ের ৩৬ জন কর্মকর্তাকে এক দিনের নোটিশে বিভিন্ন শাখায় বদলি করা হয়েছে। রোববারের মধ্যে (গতকাল) তারা বদলীকৃত স্থানে যোগদান না করলে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার হিসেবে গণ্য হবে মর্মে আদেশ দেওয়া হয়।#