শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রকল্প
আরমান হেকিম
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৪ ২২:০২ পিএম
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ছবি : সংগৃহীত
কাজের পরিমাণ কমলেও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সিলেটের শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রকল্পে; যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া বস্ত্র অধিদপ্তরের প্রকল্পটিতে নানা খাতে অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবনা নিয়েও উঠেছে আপত্তি।
আগামী সপ্তাহে প্রস্তাবনার ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা ডেকেছে পরিকল্পনা কমিশন। সেখানে আপত্তির বিষয়ে বস্ত্র অধিদপ্তরের কাছে জানতে চাওয়া হবে। ইতোমধ্যে আপত্তির বিষয়ে একটি কার্যপত্র তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি সাড়ে আট বছরেও শেষ করতে পারেনি বস্ত্র অধিদপ্তর। এজন্য প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর জন্য দ্বিতীয় সংশোধনী আনার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পাশাপাশি কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের ব্যয়ও।
যেসব আপত্তি উঠে এসেছে
দ্বিতীয় সংশোধনীতে একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের প্রস্তাবের আপত্তিতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত ১ম সংশোধিত ডিপিপিতে ৩ হাজার বর্গমিটার আয়তনের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ খাতে ১১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সংস্থান ছিল। বর্তমানে এ খাতের আয়তন বৃদ্ধি না পেলেও ৭৫ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ১১ কোটি ৯২ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ‘ড্রেন ও বক্স কালভার্ট’ এবং ‘অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও সংযোগ সড়ক’ নির্মাণের জন্য যথাক্রমে ৩৬ লাখ ও ৮৬ লাখ টাকার সংস্থান ছিল। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে এ ব্যয় যথাক্রমে ১ কোটি ৬৮ লাখ ও ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাবসহ মোট ২ কোটি ৪ লাখ ও ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতাসহ প্রস্তাবিত খাতগুলোর পূর্ণাঙ্গ ইঞ্জিনিয়ার্স এস্টিমেট সম্পর্কে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে ‘ছাত্রীনিবাস’ খাতের আয়তন বৃদ্ধি না পেলেও ১৯ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে মোট ৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সভায় আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীতে ‘ভূমি উন্নয়ন’ খাতে কাজের পরিমাণ কমলেও অতিরিক্ত প্রায় ২৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে ‘যন্ত্রপাতি ও ল্যাবসামগ্রী’ ক্রয় খাতে ১৮২ সেটের অনুকূলে ২৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সংস্থান ছিল। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপিতে সংখ্যা ও ব্যয় যথাক্রমে ৬৭ সেট ও ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি যন্ত্রপাতি এবং ল্যাবসামগ্রীর আইটেমওয়াইজ প্রাক্কলিত ব্যয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।
আলোচ্য দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে নতুন করে জেনারেটর ও একুইস্টিক মাল্টি পারপাস হল খাত অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা এবং যৌক্তিকতা নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধন প্রস্তাবে প্রাইস ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়নি; এ বিষয়ে সভাকে অবহিত করা যেতে পারে।
ক্রয় পরিকল্পনায় ক্রয় পদ্ধতি ও ধরন, অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ পিপিআর, ২০০৮ এবং আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিধি অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে উল্লেখ করা আবশ্যক। তিন সদস্যবিশিষ্ট দর যাচাই কমিটি গঠনের মাধ্যমে সব নন শিডিউল আইটেমের ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সভাকে অবহিত করা যেতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে অগ্রগতি নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য একটি অর্জনযোগ্য ও বাস্তবসম্মত সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনাসহ প্রকল্প শেষের ফলাফল টেকসইকরণের জন্য সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও বছরভিত্তিক এক্সিট প্ল্যান সংযোজন করা প্রয়োজন।
প্রকল্পের ডিপিপির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১৪৯ কোটি টাকা।
প্রকল্পের মূল মেয়াদকাল ছিল সাড়ে তিন বছর। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় তা ৯ বছরে গড়াচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় প্রথম দফায় এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় দেড় বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর করা হয়। তবু কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। চতুর্থ দফায় প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ পঞ্চম দফা বাড়ানোর প্রস্তাবনা দিয়েছে বস্ত্র অধিদপ্তর। এতে প্রকল্পের মেয়াদ আরও ছয় মাস বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৭৬ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য রেহানা পারভীন বলেন, প্রস্তাবনার ওপর যেসব বিষয়ে আপত্তি উঠেছে তা পিইসি সভায় বস্ত্র অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে। কোনোভাবেই যেন অর্থের অপচয় না হয়, সেটি নিশ্চিত করা হবে।