প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪ ২১:৫৮ পিএম
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪ ২২:০৫ পিএম
প্রতীকী ছবি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের মাস জুলাইয়ে দেশে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যা গেল ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ।
সোমবার (১২ আগস্ট) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ সালের জুলাই মাসে যে পণ্য কিনতে ১০০ টাকা ব্যয় করতে হতো ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সেই একই ধরনের পণ্য কিনতে ব্যয় করতে হয়েছে ১১১ টাকা ৬৬ পয়সা। অর্থাৎ পণ্যমূল্য বেড়েছে ১১ টাকা ৬৬ পয়সা।
এদিকে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। বিবিএসের তথ্যউপাত্ত নিয়ে এর আগে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাদের অভিযোগ, বিবিএস যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে, তাতে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিবিএস এই প্রথম মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান প্রকাশ করল, যাতে দেখা যাচ্ছে দেশে মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রেকর্ড মূল্যস্ফীতির বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এখন হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই, তাই হয়তো সঠিক তথ্য উঠে এসেছে। এখন যে তথ্য দেওয়া হয়েছে এটা অনেকখানি সঠিক তথ্য। জুলাই মাসের আন্দোলনের চাপও মূল্যস্ফীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে।’
যদিও বিবিএস বলছে, সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দেশে এক ধরনের অচল অবস্থা দেখা যায়। ফলে ঢাকা কার্যত দেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন ছিল, বন্ধ ছিল পণ্যের সরবরাহও। ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে, প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, জুলাই মাসে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের কষ্ট হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ মাসে গ্রামের মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যেখানে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৭ শতাংশে। তবে গ্রাম এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি বেশি থাকলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি শহর এলাকায় ছিল সবচেয়ে বেশি। গ্রাম এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, সেখানে শহর এলাকায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪ দশমিক ২২ শতাংশ।
এর আগে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ঠেকেছিল ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঠেকেছিল ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশে। ওই বছরের পর এ প্রথম বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি এত উচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঠেকানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্যবিদায়ি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের নেওয়া কোনো দাওয়াইতেই কাজ হচ্ছে না। এমন সময় দেশের সুদহার বাড়ানো হয়েছে, যখন সিন্ডিকেট আরও বেশি সক্রিয় হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, পদত্যাগী গভর্নর সিন্ডিকেটের হয়েই কাজ করতেন। ফলে দেশের খেলাপি ঋণ বেড়ে গিয়েছিল। ব্যাংক থেকে বেশিরভাগ নগদ অর্থ ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাওয়ার পরই সুদহার বাড়িয়েছিলেন তিনি।