প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৩৮ পিএম
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৩৯ পিএম
দুর্নীতি, দলীয়করণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে মিথ্যা অপবাদ এবং শাস্তিমূলক বদলিসহ নানা ধরনের অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. আবদুল আউয়ালের পদত্যাগ ও তার শাস্তির দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিজেআরআইর বৈষম্যবিরোধী কমিটির সভাপতি কৃষিতত্ত্ব বিভাগের চিফ সায়েন্টিফিক অফিসার (সিএসও) ড. মো. আব্দুল আলীম।
তিনি বলেন, ‘বিজেআরআইর দুর্নীতিবাজ ও ফ্যাসিস্ট মহাপরিচালক ড. আবদুল আউয়ালের পদত্যাগ ও শাস্তি চাই। তিনি এই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাত্রদের বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছিলেন। বিশেষ করে গত ৪ আগস্ট বিজেআরআইর সর্বস্তরের বিজ্ঞানী/কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে র্যালি এবং মিছিলে জোরপূর্বক বাধ্যতামূলকভাবে দাঁড় করিয়েছিলেন। তার এই কাজ ছিল অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ও দুঃখজনক।’
আব্দুল আলীম অভিযোগ করেন, ‘গবেষণার প্রয়োজনে ডিজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি পরিচালক থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সবাইকে অপেক্ষমান রুমে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে বহিরাগত লোকদের নিয়ে গল্পগুজবে থাকতেন। গবেষণা কার্যক্রমে সহযোগিতা করতেন না। তিনি বিজেআরআই রেস্ট হাউজে তার নিজ এলাকার আওয়ামী রাজনৈতিক দলীয় লোকদের নিয়ে সব সময় দখল করে রাখেন। যার ফলে কর্ম পরিবেশের প্রচণ্ড ব্যাঘাত ঘটে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোন বিষয়ে ডিজির ইচ্ছার বিরুদ্ধে মতামত দিলেই তাকে বিভিন্ন জায়গায় অনৈতিকভাবে বদলি করে দেন। এমনকি একটি পদের বিপরীতে কয়েকজনকে আঞ্চলিক/উপকেন্দ্রগুলোতে সংযুক্ত করে থাকেন। এছাড়াও জুনিয়র বিজ্ঞানীর অধীনে সিনিয়র বিজ্ঞানীকে সংযুক্ত করেছেন। এতে কাজের পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হয়েছে।’
বিজেআরআইর ডিজি আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ তোলে সিএসও বলেন, ‘ডিজি তার নিজ জেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে শতাধিক ব্যক্তিকে বিভিন্ন পদের অনুকূলে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগের আইনগত কোনো বৈধতা না থাকলেও তিনি তাদের নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন। তিনি বিজেআরআইর বিজ্ঞানী/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত বাসায় বিজেআরআই বর্হিভূত লোকজনকে অবৈধভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। কর্মরত ব্যক্তিরা বাসা পাচ্ছে না। তাদের বাইরে অন্য স্থানে বাসার ব্যবস্থা করে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ ভাড়া বাসাতেও থাকছেন।’
বিজেআরআই থেকে মহাপরিচালক নিয়োগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে নার্সভুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মহাপরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতের জন্য এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিজেআরআইর পিএসও মো. মাকসুদুর রহমান অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাফল্য কামনা করায় তাকে গত ২৬ জুলাই তার চেয়ে কয়েক গ্রেড নিচের কর্মকর্তার অধীনে বদলি করা হয়েছে।
জিআরএস বিভাগের এসএসও মো. খায়রুল হাসান প্রধান বলেন, ‘ডিজি আবদুল আউয়াল বিজেআরআইর গবেষণা কার্যক্রমকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তার কারণে বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবনমূলক কাজ করতে পারে না। নিজে নানান ফন্দি-ফিকিরে অর্থ আত্মসাৎ করেন।’
নিজের গাড়িচালক মো. সাইফুল ইসলামকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন ডিজি। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন গাড়িচালক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, তাকে কেউ আঘাত করেনি। তার হয়ে ডিজি সেনাবাহিনীর কাছে যে অভিযোগ করেছেন সে সম্পর্কেও তিনি কিছুই জানতেন না।
সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বিক্ষোভ করেন। তা ছাড়া তারা গত ৫ আগস্টের পর থেকে ডিজিকে কর্মস্থলে প্রবেশ না করতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পর বিজেআরআই ডিজি ড. মো. আবদুল আউয়াল এক সাংবাদিককে ফোন দিয়ে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে তিনি আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলেও জানান।