প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১৬:৩৩ পিএম
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৪ ১৭:১৭ পিএম
বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার টিসিবি ভবনে। প্রবা ফটো
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩টি অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যৌক্তিক মূল্যে নামিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে এসব কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা।
রবিবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিসহ সচেতনতামূলক কার্যক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূলপ্রবন্ধ তুলে ধরেন অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মো. মনোয়ার হোসেন। বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও নিজেদের মতামত ব্যক্ত করেন।
বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার। আমাদের শপথ নিতে হবে আমরা আর দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি করতে দেব না। আমাদের বিপ্লবকে স্বার্থক করতে হলে রাষ্ট্রের সকল স্তর থেকে সংস্কার করা হবে। এজন্য প্রত্যেক দুর্নীতিবাজকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৩টি অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যৌক্তিক মূল্যে নামিয়ে আনতে হবে। তা নাহলে প্রত্যেককে পদত্যাগ করতে হবে।’
এ সময় তিনি ৮টি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- টিম করে পাড়া মহল্লায় বাজার তদারকি করব, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের রসিদ থাকতে হবে ও মূল্য তালিকা থাকতে হবে, বাজার ও সরকারি জমি দখল করলে তা উচ্ছেদ করতে হবে, সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করা হবে, প্রতিটি এলাকাভিত্তিক পণ্যের মূল্য তালিকা করতে হবে, ভোক্তা অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করতে হবে। তা ছাড়া রাষ্ট্রের অন্যান্য সেবাখাতও ভোক্তা অধিদপ্তরের মতো কাজ করবে। তবে আরেকটি দিক লক্ষ্য রাখতে হবে ছাত্রদের কোনোভাবেই অন্যায়ে জড়িয়ে ফেলবেন না।
এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি দেশের অনেক জায়গায় বাজার দখল হয়ে গেছে। আগে একদলের লোক এসব নিয়ন্ত্রণ করত বর্তমানে অন্য দলের লোক তা দখল করছে। আমরা এসব দখল চাই না। আমরা চাই দখলমুক্ত হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শ্যামবাজার থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত পণ্য আসতে ৩ জায়গায় চাঁদা দিতে হয়। বর্তমানে এসব চাঁদা বন্ধ হলেও বাজারে কিন্তু পণ্যের দাম কমেনি। অথচ চাঁদাবাজি থেকে যে পরিমাণ অর্থ বেঁচে গেছে তা কম নেওয়ার কথা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘ভোক্তারা আমাদের কাছে গত এক বছরে কয়েক হাজার অভিযোগ করেছে। শিক্ষার্থীরা এসব অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখতে পারে।’
মহাপরিচালক বলেন, ‘তেলের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্ধারণ করে দিলে দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা ৬ ঘণ্টার মধ্যে তা বাড়িয়ে দেয়। আবার দাম কমলে এক মাসের ব্যবধানেও কমানো হয় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাজার তদারকি করব। তবে শিক্ষার্থীরা যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়।’
ফকির মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতবছর ৭৮-৭৯ জন অফিসার নিয়ে দেশের সাড়ে ১০ হাজার বাজার তদারকি করা হয়েছে।’ ডিমের বাজার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ম্যাসেজের মাধ্যমে ডিমের দাম নির্ধারিত হয় তেজগাঁও বাজার থেকে। জুতচুরি করে লাখ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলা হয়।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি জানান। সেসবের মধ্যে রয়েছে- কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে, বাজাগুলোতে দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করতে হবে, শিক্ষার্থীদের কাছে প্রত্যেক বাজার কমিটির তালিকা দিতে হবে, এখনও ট্রাকগুলোতে চাঁদাবাজির খবর পাওয়া যাচ্ছে; এসব বন্ধ না হলে চাঁদাবাজদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে, মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডাক্তাররা অনেক ভিটিজ নিচ্ছেন; এসব যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে হবে।