আমিনুল ইসলাম মিঠু
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৩৩ পিএম
আপডেট : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১৩:৩৭ পিএম
কোটা আন্দোলন, সংঘর্ষ ও দেশজুড়ে কারফিউ জারির প্রভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন জেলায় যেতে বিমানে যাতায়াতকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে চলাচল করা চারটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। গত কয়েকদিন ধরে অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করা যাত্রীদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে টিকিট কিনতে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বেশি গুনতে হয়েছে। তবে গত তিন দিন ধরে চাহিদা কমায় টিকিটের দামও কমেছে বলে জানিয়েছে এয়ারলাইন্সগুলো।
যাত্রীদের অভিযোগ, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো টিকিটের বাড়তি দাম নিয়েছে। যাত্রীরা বলেছেন, দেশের ভেতরে বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের কাছ থেকে টিকিটের দাম ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রাখা হয়েছে।
অবশ্য উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো বলছে, নির্ধারিত ফ্লাইটের অধিকাংশ টিকিট সাধারণত আগাম বিক্রি হয়ে যায়। শেষের দিকে যেসব টিকিট থাকে, তার দাম বেশি হয়। গত সোমবার থেকে যাত্রীর চাপ কমে এসেছে। এখন উল্টো যাত্রীসংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার এবং এরপর থেকে প্রায় অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়েছে।
বর্তমানে দেশে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসরকারিভাবে ইউএস বাংলা, নভো এয়ার ও এয়ার অ্যাস্ট্রা অভ্যন্তরীণ রুটে প্রতিদিন অর্ধশতাধিকের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সড়ক পথ অবরুদ্ধ থাকায় আকাশ পথকে বেছে নিয়েছিলেন যাত্রীরা। এতে শুরুতে ফ্লাইটের তুলনায় যাত্রীসংখ্যা বেশি ছিল। পরবর্তীতে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ম্যানুয়ালি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছিল তাদের। ফলে অপারেশনাল খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তবে সব চেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট ভর্তি যাত্রী পরিবহন করলেও ফিরতি ফ্লাইট প্রায় অল্প যাত্রী নিয়ে ফিরতে হয়েছিল তাদের। ফলে বিমান পরিচালনায় খরচ বেশি হয়েছিল। এছাড়া আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইটের ভাড়া ছয়টি ধাপে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। এসব স্তরভেদে টিকিটের দাম ৫ হাজার ২০০ থেকে ১১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তাই শেষ সময়ে টিকিট নিশ্চিত করলে সর্বোচ্চ দামে কিনতে হয়।
অভ্যন্তরীণ রুটে দিনে মোট ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রা। যাত্রীস্বল্পতায় গত মঙ্গলবার থেকে সংস্থাটির ফ্লাইট কমানোসহ বাতিল করতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন এয়ারলাইন্সটির কর্মকর্তারা।
এয়ার অ্যাস্ট্রার জনসংযোগ কর্মকর্তা হাসান শুভ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সাধারণত অভ্যন্তরীণ রুটে আমরা দিনে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকি। আর সড়ক অবরোধ ও কারফিউ চলাকালীন এই সময়েও আমাদের ফ্লাইট সংখ্যা একই। তবে সপ্তাহের শুরুতে কয়েক দিন যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। বিশেষ করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। বিপদকালীন পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি। তবে ইচ্ছাকৃত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ এয়ারলাইন্স পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, এয়ালাইন্সের নিয়ম অনুযায়ী ছয় ধাপে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। ফ্লাইটে সময় যত ঘনিয়ে আসে ভাড়া স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়ে থাকে। তবে ইন্টারনেট না থাকায় ম্যানুয়ালি ফ্লাইটের কার্যক্রম পরিচালনা করাসহ একমুখী যাত্রীর কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করে যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। তবে গত কয়েকদিন ধরে যাত্রীসংখ্যা কমেছে। অনেক ক্ষেত্রে ফ্লাইটও বাতিল করতে হয়েছে আমাদের। এই মুহূর্তে আকাশপথে যাতায়াতে টিকিটের দাম কয়েক দিন আগের চেয়ে কমই আছে।
ইউএসবাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, যাত্রীর চাপ অনেকটা এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আমরা প্রতিদিন ৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছি। তবে আমাদের কোনো ধরনের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। শুরুর মূল্য থেকে সর্বোচ্চ মূল্য পর্যন্ত টিকিটের দাম একই আছে। এখন কেউ যদি আগে টিকিট কিনে ভ্রমণ করে থাকেন এবং পরে ফ্লাইটের ঠিক আগে টিকিট কেনেন সেটি বেশি মনে হতে পারে।
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত শতভাগ টিকিট বিক্রি করেই ফ্লাইট পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান। দেশের মধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যে তাদের ফ্লাইটের টিকিটের দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৭ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে কয়েকজন যাত্রী জানিয়েছেন, অন্য তিনটি বেসরকারি উড়োজাহাজের চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম তুলনামূলক কম ছিল। তাই অনেকেরই আগ্রহ ও চাহিদা ছিল রাষ্ট্রীয় এই উড়োজাহাজকে ঘিরেই।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ রুটে আমাদের ফ্লাইট কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। সপ্তাহে সর্বনিম্ন ১১টি ও সর্বোচ্চ ১২টি ফ্লাইট চলাচল করছে অভ্যন্তরীণ সাতটি রুটে। কোনো ফ্লাইটই খালি ছিল না।