প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪ ২২:৫২ পিএম
বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখছে থাইল্যান্ড। তাই তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পর্যটনে সহায়তা করার কথা জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বাণিজ্য প্রতিনিধি ডক্টর নালিনি তাভিসিন।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় নির্মাণাধীন সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শনে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও থাইল্যান্ড দূতাবাসের উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
থাই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাওয়ার ও রিনিউবল এনার্জি, শিল্প পার্ক স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট, রিসোর্ট ও হোটেল ইত্যাদি সেক্টরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) পক্ষে মহাপরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. মাছুমুর রহমানসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, উপজেলা প্রশাসন ও বেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ট্যুরিজম পার্ক পরিদর্শনকালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য প্রতিনিধি ডক্টর নালিনি তাভিসিন সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘বেজার এ উদ্যোগের ফলে আগামীতে বাংলাদেশে পর্যটন খাত যথেষ্ট বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং থাইল্যান্ডের ট্যুরিজম সেক্টরের পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ পার্কের সফলতার জন্য বেজাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তার দেশ।’
তিনি আরও বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের অবস্থান খুবই চমৎকার, যার একদিকে বঙ্গোপসাগরের নীল জলরাশি অন্যদিকে সবুজবেষ্টিত পাহাড়, তাই আগামীতে সারা বিশ্বের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে এ ট্যুরিজম পার্ক। তিনি থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীদের সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দেশের পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ক্ষেত্রে এই ট্যুরিজম পার্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরকালে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার এই সফরের রেশ ধরে এই ব্যবসায়িক সফরের আয়োজন করেছে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. মো. সারোয়ার বারী বলেন, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ২৮টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছেÑ যার প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৬ কোটি মার্কিন ডলার।’
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বেজা সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ করেছে এবং অন্যান্য সকল ইউটিলিটি সুবিধা নিশ্চিত করতে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীদের সাবরাং ও নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো-ট্যুরিজম পার্কে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে এরই মধ্যে ভূমি উন্নয়ন, প্রশাসনিক ভবন, ডাইক নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, ছয় ভেন্ট স্লুইস গেট (রেগুলেটর) নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের আইকনিক ফটো কর্নার নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি প্রবেশদ্বার ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
৯৬৪ দশমিক ৯৫ একর আয়তনের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নে অবস্থিত। পার্কটি কক্সবাজার শহর থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মেরিন ড্রাইভের মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। তা ছাড়া নিকটস্থ জাতীয় মহাসড়ক এন-১-এর মাধ্যমে ট্যুরিজম পার্কের সঙ্গে দেশের অন্যান্য এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিদ্যমান। শিগগির কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। বর্তমানে ঢাকা-কক্সবাজার থেকে সরাসরি রেল চালু হয়েছে। এসব মহাপরিকল্পনার কারণে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক হবে আগামী উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা অনুযায়ী সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ৩৯ হাজার পর্যটক আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ পরিদর্শন করতে পারবে এবং প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। এ ছাড়া, টেকনাফ উপজেলার প্রায় ৩০০ একর জমিতে দেশের প্রথম দ্বীপভিত্তিক নাফ ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনে বেজা পিপিপি ডেভেলপার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করেছে।