প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৪ ১৪:২৮ পিএম
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামটরের বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে সিগারেটে কার্যকর করারোপ বিষয়ে বাজেট-পরবর্তীনীতি সংলাপ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রবা ফটো
জাতীয় সংসদের ভেতরকে ধূমপানমুক্ত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। তিনি বলেন, দেশকে তামাকমুক্ত করতে হবে। এজন্য আমরা ধূমপানমুক্ত সংসদ (সংসদ ভবন) চাই। রাশেদ খান মেননের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এ দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে মেনন জানান, অনেক সংসদ সদস্য কায়দা করে সংসদের লবিতে সিগারেট খান। তারা সিগারেটের বদলে ইলেক্ট্রনিক সিগারেট নিয়ে প্রবেশ করে। এসবরের পরোক্ষে প্রভাব অন্যদের ওপর পড়ে।
সিগারেটে কার্যকর করারোপ বিষয়ে বাজেট-পরবর্তীনীতি সংলাপ শীর্ষক আলোচনা সভায় ড. আতিউর রহমান এ প্রস্তাব করেন।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর বাংলামটরের বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উন্নয়ন সমন্বয়। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে সংসদ সদস্যদের মধো বক্তব্য রাখেন রাশেদ খান মেনন, আক্তারুজ্জামান, অপরাজিতা হক, আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান সংসদ সংসদ্যরা তথ্যভিত্তিক আলোচনা করছে। তাদের দ্বারা দেশ খুব উপকৃত হবে। তিনি তামাকপণ্য তথা সিহারেটে কর ও দাম দুটিই বাড়াতে হবে বলে দাবি করেন। বলেন, চলতি বাজেটে সিগারেটে যে করারোপ করা হয়েছে তা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
ড. আতিউর রহমান বলেন, আমরা ধূমপানমুক্ত সংসদ চাই। সংসদে মধ্যবাজেট আলোচনায় সিগারেটের করারোপের এসব নিয়ে কথা বলতে হবে। আমাদের দেশে মধ্যমেয়াদী আলোচনা হয় না অথচ শ্রীলঙ্কার সংসদে তা হয়ে থাকে। এটি আমাদের সংসদেও সে ধরনের ব্যবস্থা রাখতে আইন করতে হবে।
রাখেন রাশেদ খান মেনন বলেন, আগে বাজেট আসলেই সংসদ সদস্যদের ডিও লেটার দিতে হতো, এখন আমরা দেই না। এটি একটি ইতিবাচক দিক। নাগরিক আন্দোলনের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এই আন্দোলন বৃহৎ আকারে ছড়িয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, জাপান, ব্রিটিশ টোবাকো কোম্পানিতে সরকারের অংশিদারিত্বের কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অধিক করারোপ থেকে থমকে যায়। এবারের বাজেটে সিগারেটে যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তুলনা করলে পরিমাণ কম হয়েছে।
তিনি বলেন, সিগারেটের ক্ষতিকর বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতনা বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিমানে ধূমপানমুক্ত কিন্তু এয়ারপোর্টে আলাদা স্থান করে দেওয়া হয়েছে এতে পরোক্ষভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
মেনন বলেন, এখন সংসদ লবিতে এমপিরা ইলেক্ট্রনিক সিগারেট খাচ্ছে। আমাদেন তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তির হার বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছে সিগারেট পান। তিনি বলেন, সিগারেট বন্ধ করতে হলে তামাকচাষ বন্ধ করতে হবে। কেননা তামাক জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। এজন্য বিকল্প চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে।
সিগারেট, জর্দা, গুলসহ তামাকজাতীয় যেসব দ্রব্য আছে সেগুলোও বন্ধ করতে হবে। কেননা এতে আমরা যে রাজস্ব পাই তার চেয়ে বেশি স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়।
তিনি মধ্য বাজেট আলোচনায় সিগারেটের করারোপের ব্যাপারে আলোচনা করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
আক্তারুজ্জামান বলেন, সিগারেট কোম্পানির লবিং খুব শক্তিশালী। আমরা সিগারেটের আন্দোলনকে আরো সম্প্রসারিত করবো।
তিনি উন্নয়ন সমন্বয়ের হেল্প ডেস্কের কার্যক্রমে সংসদ সদস্যরা উপকৃত হয়েছে বলেও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সিগারেটের দাম বাড়লেও ধূমপান কমছে না। এটি এমন আসক্তি দাম বাড়ালেও কমে না। ১৯৫৬ সালের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আইনে সিগারেটকে সেখানে রাখা হয়েছে, যার ফলে করোনাকালে সবকিছু বন্ধ থাকলেও তাদের উৎপাদন থেমে থাকেনি।
সরকার প্রধান যখন ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত দেশ গড়ার অঙ্গিকার করেছেন সেখানে ২০২১ সালে সিগারেট কোম্পানিগুলোকে ২ হাজার ৪০০ টাকা ভ্যাট মওকুফ করে দিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের কর্মকর্তারা চাকরিজীবনে এদেরকে সহযোগিতা করে ও অবসরে গিয়ে এসব কোম্পানিতে চাকরি করছে।
তিনি বলেন, ধূমপানের কারণে এর ক্ষতিকর দিকগুলো ২০/৩০ বছর পরও প্রভাব ফেলে।
অপরাজিতা হক বলেন, যে হারে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে ২০৪০ সালে সিগারেট পানে শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে কি না সন্দেহ রয়েছে। ধূমপানে স্বাস্থ্যের জন্য যে ক্ষতিকর প্রভাব তা আমরা সকলেই জানি, তারপরও ধূমপান ছাড়ছে না। ধূমপানের কারণে যখন মানুষ অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে তখন তার পরিবারের কী সমস্যা তৈরি করে সেটি সমাজে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই নিঃশ্ব হয়ে পড়ে। এতে পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক নাজুকতা তৈরি হয়।
তিনি বলেন, আমাদের ৪ স্তর বিশিষ্ট কর প্রথা রয়েছে। এটি কীভাবে দুই স্তরে নিয়ে আসা যায় সে চিন্তা করতে হবে। সেখানে তামাকজাত পণ্যের কর বেশি নির্ধারণ করতে হবে।
আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগার বলেন, সিগারেট পান নিরুৎসাহিত করতে আমাদের শক্ত আন্দোলন করা দরকার। তিনি বলেন, এটি এমন নেশা যা দাম বাড়ানোর পরেও মানুষ খাচ্ছে। তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে আমরা রাজনৈতিক সভাগুলোতে সচেতনতামূলক বক্তব্য রাখবো। এতে অনেক কাজ সহজ হয়ে যাবে।