প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:৫২ পিএম
রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানির ফলে ফের রেমিট্যান্সে (প্রবাসী আয়) প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। যার পরিমাণ ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে জনশক্তি রপ্তানির সঙ্গে তুলনা করলে তা আশানুরূপ নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এখনও বিপুল অঙ্কের রেমিট্যান্স হুন্ডিসহ অবৈধ পথে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দুই লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। এটি এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
সোমবার (১ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রদত্ত তথ্য বলছে, সদ্যসমাপ্ত জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। একক মাসের হিসাবে জুনের প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ঈদের আগে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কোরবানির ঈদের আগে জুনে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে।
গেল অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ডলার, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি, জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ডলার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার এবং শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে।
তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা অর্থবছর হিসাবে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স।
তথ্য বলছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে আগের অর্থবছরের চেয়ে দুই দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। অর্থবছরটি শেষ করেছিল দুই দশমিক ৭৫ শতাংশ রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিতে।
আরও আগে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। যেখানে পাঁচ বছর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে বিএমইটির তত্ত্বাবধানে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান। যা ছিল ওই সময় পর্যন্ত এক বছরে সর্বাধিক কর্মী বিদেশে যাওয়ার রেকর্ড। ফলে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং পরের ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। ওই সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। ওই বছর করোনা মহামারির কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিপুল রেমিট্যান্স পাঠান।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সাত লাখ ৩৪ হাজার, ২০১৯ সালে সাত লাখ, ২০২০ সালে দুই লাখ ১৭ হাজার (করোনার কারণে কম) ও ২০২১ সালে ছয় লাখ ১৭ হাজার কর্মী বিদেশে যান। ২০২২ সালে জনশক্তি রপ্তানিতে ফের রেকর্ড হয়। এক বছরে ১১ লাখ ৩৫ হাজার কর্মী বিদেশে যান। যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পরের বছর ২০২৩ সালে ফের রেকর্ড গড়ে জনশক্তি রপ্তানি। এ বছর সর্বোচ্চ ১৩ লাখেরও বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। আর চলতি ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে গেছে ৩ লাখ ২২ হাজার কর্মী।
করোনা-পরবর্তী সময়ে হুন্ডির দাপটে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে শুরু করে। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। রেকর্ড কর্মী বিদেশে যাওয়ার পরও ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের রেকর্ড ১৩ লাখ কর্মীর ওপর ভর করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।