প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৪ ২১:৪৪ পিএম
রাজধানীর একটি হোটেলে এফআইসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলন। ছবি : সংগৃহীত
বারবার নীতি পরিবর্তনকে বিদেশী বিনিয়োগের প্রধান বাধা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কিছু সুবিধার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছেন। তবে হঠাৎ করে সরকারের ট্যাক্সসহ বিভিন্ন পলিসি (নীতি) পরিবর্তন তাদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। সোমবার (১০ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান।
সংগঠনটির সভাপতি জাবেদ আকতার বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত হওয়া ইকোনমিক জোনের বিনিয়োগকারিদের বেশকিছু সুবিধার প্রতুশ্রুতি ছিল, হঠাৎ করেই তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশী বিনিয়োগকারিদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নতুন করে তারা হয়ত আর বিনিয়োগ করবেন না এবং পাইপলাইনে যেসব বিনিয়োগ আছে সেগুলোও পুনর্বিবেচনা করবে।’
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী বলেন, ‘হঠাৎ করে পলিসি চেঞ্জ হলে রং সিগন্যাল যায়, তাহলে কীভাবে এফডিআই (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ) আসবে?’
প্রতিবেশি দেশগুলোতে এফডিআইয়ের ক্ষেত্রে দেওয়া বিভিন্ন সুবিধার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশই একমাত্র গন্তব্য নয়। বিনিয়োগকারী ও বিদেশি কোম্পানি অন্যান্য দেশের সুবিধাগুলোর কথাও বিবেচনা করছেন। বাংলাদেশে যদি তারা নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি অনুভব করেন, তাহলে অন্য দেশে চলে যাবেন।’
তিনি আরও বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারিদের জন্য ন্যূনতম কিছু সুবিধা ছিল, তা-ও এবার তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারকে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।’
সংগঠনটির উপদেষ্টা ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম বলেন, ‘প্রমিজের (বিনিয়োগকারীদের বেনিফিট) ভিত্তিতে বিনিয়োগ করেছি। হঠাৎ করে পলিসি চেঞ্জ হয়ে গেলে এই বিনিয়োগকারীদের আরেকবার আনা কঠিন হবে।’
এ সময় বাজেটে নেওয়া কিছু ইতিবাচক উদ্যোগেরও প্রশংসা করে সংগঠনটি। তারা মনে করে, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে তা উচ্চাভিলাষী। তবে কার্যকরী পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব। আর এ লক্ষ্য অর্জনে আর্থিক নীতির আরও সংস্কার প্রয়োজন।
তবে টেলিকম, কার্বনেটেড বেভারেজ ও ওয়াটার পিউরিফায়ারের ওপর আরোপিত শুল্ক ও করকে অতিরিক্ত দাবি করে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ফিকি সভাপতি। তিনি বলেন, এসব খাতে এই বর্ধিত কর ব্যবসার মুনাফা ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করবে। ব্যক্তিগত আয়কর হার বাড়ানোর প্রস্তাবের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ফিকি। এটি সৎ করদাতাদের আয়কর দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে সংগঠনটির নেতারা মনে করেন। তবে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে উৎসে কর হ্রাসের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সিনিয়র নেতারা ছাড়াও বিদেশি বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।