ব্যাংক খাত
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ২১:২৯ পিএম
খেলাপি ঋণের রেকর্ডের ফলে গ্রাহকের আমানতের নিরাপত্তায় রাখা সঞ্চয়েও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ব্যাংক খাতে প্রভিশন নামে এ হিসাবে ঘাটতির অঙ্ক এখন ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ হচ্ছে, গ্রাহকের আমানত নিরাপদ রাখতে সক্ষমতা হারাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এতদিন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের নাম প্রকাশ করা হতো। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চয় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় আস্থা সংকট মোকাবিলায় ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ থেকে বিরত থাকছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একাধিক প্রতিবেদনে অধিকাংশ ব্যাংকের স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। তথ্য অনুযায়ী, দেশের এক চতুর্থাংশ ব্যাংক এখন মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উচ্চ খেলাপি ঋণের ভারে খুড়িয়ে চলছে দেশের ব্যাংক খাত। ঋণ জালিয়াতি এবং অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক। ফলে ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের ব্যাংক খাতের প্রাভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দিন দিন তো খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তাই প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে। এভাবে বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। ক্যামেলস রেটিংয়ে র্যাঙ্ক কমে যাবে। প্রভিশন ঘাটতি কমাতে হলে আগে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে। যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে হবে।’
নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে পরিচালন মুনাফার ০.৫ থেকে ৫ শতাংশ সাধারণ ক্যাটাগরির ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। নিম্নমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন এবং ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয় সন্দেহজনক খেলাপি ঋণের বিপরীতে। এছাড়া, প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১০০ ভাগ প্রভিশনিং আলাদা করে রাখার বিধান রয়েছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি অশনি সংকেত, কারণ এটি ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে, যা মূলত উচ্চ খেলাপি ঋণের ফল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ভাল-মন্দ মিলিয়ে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ১১ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চয় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে ব্যাংকগুলো প্রভিশন জমা রাখতে সক্ষম হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের মার্চ মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা; যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৯ শতাংশ। সে হিসেবে মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা।