× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে গমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪ ২১:৩৩ পিএম

আপডেট : ৩০ মে ২০২৪ ২১:৫১ পিএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত সপ্তাহে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) গম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। এক সপ্তাহ পেরোনোর আগেই ওই গম এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি গমের দাম বেড়েছে অন্তত ১০০ টাকা। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধির কারণেই বর্তমানে খাতুনগঞ্জে গমের দাম বাড়ছে। এর সঙ্গে ডলারের মূল্যবৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন তারা। ৮ মে একসঙ্গে ৭ টাকা দাম বাড়িয়ে প্রতি ডলারের মূল্য ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রভাবে বাজারে গমের দাম বাড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহেদুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বাজারে এখন গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। রাশিয়া, ইউক্রেনের প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪২০ টাকায়। গত সপ্তাহেও এই গম বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়।’

দাম কেন বাড়ছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই কারণে এখন বাজারে গমের দাম বাড়ছে। একটি হলো- ডলারের দাম বৃদ্ধি, অন্যটি হলো- আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাই দেশেও গমের দাম বাড়ছে।’

ব্যবসায়ীরা ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে দাঁড় করালেও গম আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়া দামে কেনা গম এখনও দেশে আসেনি। চলতি মাসে যেসব গম আমদানি হয়েছে সেগুলোর ৯০ শতাংশের আমদানিমূল্য পরিশোধ করা হয়েছে প্রতি ডলার ১১১ টাকা দামে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গমের বার্ষিক চাহিদা ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সারা দেশে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদন হয়। চাহিদার বাকি গম ইউক্রেন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে না পারায় দুই বছর ধরে দেশে গম আমদানি কিছুটা কমেছে। 

আমদানি করা গমের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে। উদ্ভিদ সংঘ নিরোধ (চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর) কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৪৪ লাখ ৭৭ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন। তবে গত অর্থবছরের তুলনায় এবার গমের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই দেশে গম আমদানি হয়েছে ৪৬ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন। যার অধিকাংশই আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপ ও টিকে গ্রুপ।

গম আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, আমদানি করা এসব গম শুল্কায়ন করতে গিয়ে আমদানিকারকরা আমদানিমূল্য দেখিয়েছেন ২৬ থেকে ৩২ সেন্টস। এ হিসাবে গত ১১ মাসে আমদানি করা এসব গমের গড় আমদানিমূল্য ছিল ২৯ সেন্টস। প্রতি ডলার ১১০ থেকে ১১১ টাকা ধরে এই আমদানিমূল্য পরিশোধ করেছেন আমদানিকারকরা। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি কেজি গমের আমদানিমূল্য ছিল ৩২ টাকা। 

গত ১ এপ্রিল খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি কমোডিটিস ৯৫২ মেট্রিক টন গম আমদানি করে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিল অব এন্ট্রিতে ওই গমের আমদানিমূল্য দেখানো হয় ৩০ সেন্টস। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ওই গম ৪৩ সেন্টসে শুল্কায়ন করে। প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে আমদানিমূল্য পরিশোধ করে সিটি কমোডিটিস। এ হিসাবে গমের আমদানিমূল্য ছিল ৩৩ টাকা। কাস্টমস ডিউটি না থাকায় শুধু ভ্যাট দিয়ে গমগুলো খালাস করা হয়। ওই গমই এখন ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকায়। 

খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারে এখন ইউক্রেন, রাশিয়ার গমই বেশি বিক্রি হচ্ছে। কানাডার গমও বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তবে পরিমাণে কিছুটা কম। বৃহস্পতিবার বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেনের প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪২০ টাকায়। অন্যদিকে কানাডার প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।

তবে গমের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেড় থেকে দুই মাস ধরেই বাজারে গমের দাম বাড়ছে। বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, ৮ এপ্রিল থেকে ৩০ মে পর্যন্ত এক মাস ২২ দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। ৮ এপ্রিল যেখানে প্রতি টন গম বিক্রি হয়েছিল ২০৩ ডলারে, সেখানে ৩০ মে প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ২৬৩ ডলারে। এই হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি গমের দাম বেড়েছে ৫৯ ডলার; প্রায় ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। 

বিজনেস ইনসাইডারের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ২৬৩ ডলারে। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা দরে হিসাব করলে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি টন গম বিক্রি হচ্ছে ৩০ হাজার ৭৭১ টাকা। যেখানে প্রতি কেজি গমের আমদানিমূল্য পড়ছে ৩২ টাকা। গম আমদানিতে কাস্টমস শুল্ককর না থাকায় শুধু ভ্যাট দিয়েই এই গম খালাস করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা