× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাঠপ্রতিক্রিয়া

ইয়াহইয়া ফজলের উপন্যাস ‘পরানে পড়িয়াছে টান’

মিসবাহ জামিল

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৪১ পিএম

আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১১:০৯ এএম

ইয়াহইয়া ফজলের উপন্যাস ‘পরানে পড়িয়াছে টান’

উপন্যাসটা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক। সিলেট অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধকালীন নানান ঘটনা উঠে এসেছে। তাই বলে বইটাকে আঞ্চলিক ট্যাগ দেওয়া উচিত হবে না। ছাতকের রেলস্টেশন ও রজ্জুপথ স্টেশন থেকে শুরু উপন্যাসটার। মানে কাহিনি শুরু ঐখানকার পাথরশ্রমিক, বেদে ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জীবন-চরিত্র দিয়ে। ইয়াহইয়া ফজলের লেখা এই গ্রন্থের নাম ‘পরানে পড়িয়াছে টান’।

এই অঞ্চলের, মানে সিলেটের একটা শ্রেণির মানুষের জীবনমান ও মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কাহিনি দিয়ে আগে কোনো উপন্যাস হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ভালো কিছু হলে নিশ্চয়ই শুনতে পেতাম। ইয়াহইয়া ফজলের উপন্যাসের একটা দিক ভালো লাগছে যে, তিনি সংলাপে সিলেটি মাতকথার ব্যবহার করেছেন। এ ব্যাপারে অনেকে দৈন্যতা দেখান। এ অঞ্চলে বসে, অন্য অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার করেন (এক অঞ্চলে থেকে অন্য অঞ্চলের ভাষা ব্যবহার করা যাবে না, তা বলছি না। শুধু দৈন্যতার বিষয়টার ইঙ্গিত করতে চেয়েছি)। তারা মনে করেন, সিলেটি কথা ঢোকানো মানে ক্ষেদ ব্যাপার। কিন্তু এখানে ফজল ভাইয়ের উদারতা দেখতে পাই।

এ বিষয়ে আলোকপাত করায় মনে করার কারণ নেই যে, আমি নির্দিষ্ট আঞ্চলিকতার পক্ষপাতী। সৈয়দ শামসুল হকের পরানের গহীন ভেতর কাব্যের আঞ্চলিক ভাষা-বিষয়-আশয় যেমন আমরা গ্রহণ করেছি, সেটা আমাদের সবার হয়ে উঠেছে। তেমনি অন্য সব আঞ্চলিক ভাষা-বিষয়-আশয় উঠে আসুক শিল্পসাহিত্যে এবং তা আমাদের সবার হোক।

উপন্যাসটি এক বসাতেই শেষ করতে বাধ্য হয়েছি। ঝরঝরে গদ্য। সহজ-সাবলীল ভাষা ও বর্ণনা। কোনো ধরনের গোঁজামিল নাই গল্পের ভেতর। কোনো বিরক্তির উদ্রেক হয়নি। এই বইপাঠ চোখ ও মনের পথ্য হিসাবে কাজ করেছে। সজীবতা অনুভব করেছি। 

গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন আলফু ও রাবেয়া নামের তরুণ-তরুণী। আলফু রজ্জুপথ মানে রোপওয়ে কর্মকর্তাদের রান্নাবান্না অর্থাৎ বাবুর্চির কাজ করেন। আর রাবেয়া যাত্রাদলের সদস্য। যাত্রার প্রতি যার তীব্র আবেগ-আহ্লাদ। দুজনের মধ্যে একটা ভাব বলি আর সম্পর্ক বলি গড়ে উঠেছে। সে সম্পর্ক প্রেমের অথবা তার চেয়েও বেশি কিছু। একটা সময় তাদের সম্পর্কে টান পড়ে। আলফু রোপওয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে ঝগড়া করে তার মাথায় বাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসে ছাতক থেকে সিলেটে। তখন চারদিকে জরুরি অবস্থা। একাত্তর সাল। মানুষ মারার দৃশ্য। এসব আলফুকে মানসিকভাবে আহত করে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। 

গল্পে বঙ্গবীর জেনারেল ওসমানীর বীরত্বের, মহানুভবতার নানা বিষয় উঠে এসেছে। এ ছাড়া সি আর দত্ত, মীর শওকত আলীসহ অনেকের কথা এসেছে। যারা এই অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায়। এসব বিষয়বস্তু নিয়েই ‘পরানে পড়িয়াছে টান’ উপন্যাসের জমিন।

মুক্তিযুদ্ধের এসব বিষয় লেখকের নিজ চোখে দেখা নয়। এগুলো তিনি বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। পেশাগত কাজের অংশ হিসেবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব বয়ান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই গল্পের অবতারণা। লেখক ভূমিকায় তা উল্লেখ করেছেন।

ইয়াহইয়া ফজলের উপন্যাস ‘পরানে পড়িয়াছে টান’ প্রজন্মের পাঠককে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ও উৎকৃষ্ট শিল্পের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে বলে মনে হয়। আমরা ভালো কিছু পেয়েছি। তার গদ্যের বন্দনা করি।


গ্রন্থপরিচিতি

পরানে পড়িয়াছে টান

লেখক : ইয়াহইয়া ফজল

প্রকাশনী : চৈতন্য 

প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ

মূল্য : ৩০০ টাকা


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা