মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:০৪ পিএম
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ২৩:৪৮ পিএম
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা প্রেরণকারী দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ প্রান্তে, বিশেষ করে আফ্রিকায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা গত কয়েক দশক ধরে যে ভূমিকা পালন করে আসছেন, তা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। তার সুনাম আজ সর্বত্র।
শান্তিরক্ষীর কাজ সহজ নয়। পরিবার-পরিজনহীন সুদূরে রেখে, গহীন কোনো উপত্যকায় বা ঘনজঙ্গলে বিবাদমান সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর নৃশংস লড়াইয়ের মাঝে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং তা রক্ষা করা খুবই কঠিন। এ কাজে এখন পর্যন্ত অনেককেই প্রাণ হারাতে হয়েছে।
একজন শান্তিরক্ষীর সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কাহিনী নিয়েই শাব্বির আহসানের রোমাঞ্চ উপন্যাস –‘দ্য পিসকিপার’। এটি লেখা হয়েছে আত্মজবানিতে, কাল্পনিক মেজর সামিরের বরাতে।
তিনি কীভাবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অংশ হয়ে কঙ্গোতে গেলেন, তা দিয়ে শুরু। তারপর অচেনা, দুর্গম ও সংঘাতপূর্ণ জনপদে কাজ করতে গিয়ে বিচিত্র সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় ও বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার শ্বাসরুদ্ধকর বিবরণ। সেগুলোর কিছুটা আনন্দের ও অনেকটা ভীতিকর।
উপন্যাসটি আফ্রিকার অনেক অজানাকে তুলে এনেছে, যা জানার স্বাভাবিক আগ্রহ আমাদের মধ্যে কাজ করে। কিন্তু সেভাবে আমরা জানতে পারিনি কখনো। বিশেষ করে সেখানে কী ঘটে, কেন যেতে হয় শান্তিরক্ষীদের – এসবের কিছুটা হয়তো আমাদের জানা হয়েছে বিভিন্ন উৎস থেকে। কিন্তু সেই জীবনের কাছ থেকে জানা হয়নি।
যদিও এটি একটি ফিকশন, তবে বিবরণে বোঝা যায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ছাড়া সেই জীবনের বা ঘটনার এমন বাস্তব চিত্র তুলে ধরা অসম্ভব। যে বুদ্ধি আর রসবোধের জোরে গল্পের কথক আফ্রিকার অজানা বাস্তবতায় মানিয়ে চলেন, সামলে নেন অকল্পনীয় পরিস্থিতিতে, বেঁচে যান সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে, এমনকি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন নরখাদকদের হাত থেকে, তা যে লেখকের নিজেরই, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
সেরকম বৈরি পরিস্থিতিতে আর সহায় হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকে যাওয়া অন্য শান্তিরক্ষীরা আর স্থানীয়দের মধ্যে যারা ছিলেন মানবিক তারা। আত্মীয়হীন সেই জায়গায় যারা হয়ে উঠেছিলেন একেকজন পরম বান্ধব, সুহৃদ।
এসব ঘটনার অনুষঙ্গেই কথক স্থানীয়দের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিলেন মমতায়। মানবিকতায় আপন করে তুলেছিলেন, সারিয়ে তুলেছিলেন সেখানকার যুদ্ধপীড়িত, বিপন্ন মানুষদের। এক বাঙালি হৃদয় জয় করে নেয় আফ্রিকীয় ভালবাসা।
প্রতিটি জায়গায় বিষম অভিজ্ঞতার বিপরীতে অপার্থিব বন্ধুত্ব। আবার এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা কর্তব্যকেন্দ্র পরিবর্তন। সমান্তরালে দেশে উৎকণ্ঠিত স্বজনদের বিরহে ক্রমেই উচাটন হতে থাকা মন।
নাটকীয়তায়, বর্ণনাভঙ্গিতে অসমান্তরাল। একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো বই। অন্বিষ্ট আলাপে প্রতিটি চরিত্রের উন্মোচন, কল্পনার বৈভবে প্রতিটি মুহূর্তের উদযাপনে বাংলাদেশ ও আফ্রিকাফুটে ওঠে স্বকীয় বর্ণিলতায়।
সমৃদ্ধ সাহিত্যদৃষ্টি ও সৃষ্টিশীল সামর্থ্যে উপন্যাসটির প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ইংরেজিতে। সেই সাহিত্য আলোড়ন ফেলেছিল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। যা বাংলাদেশিদের লেখাগুলো মধ্যে বেস্টসেলার। স্বাভাবিকভাবেই অপেক্ষা ছিল বাংলা সংস্করণের। এবার সেটিও হলো। মেলায় এসেছে সম্প্রতি। ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলে দেওয়া প্রকাশনাটি শব্দশৈলীর।