খাগড়াছড়ি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:০৬ পিএম
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩৪ পিএম
আত্মপরিচয় ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সমুন্নত রাখার লক্ষ্য নিয়ে নানা আয়োজনে খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী বরণ করেছে ১৪৩৩ ত্রিপুরাব্দ। এ উপলক্ষে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার পেরাছড়া ইউনিয়নে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক শাখার আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিয়াই হারুম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে শেষ হয়। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন ও ত্রিপুরাব্দ ক্যালেন্ডার মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ করা হয়। পরে ঐতিহ্যবাহী কাথারক (বোতল) নৃত্য, ত্রিপুরাদের লোকসংস্কৃতি খেলাংবার নাটক ও স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ খাগড়াছড়ির সাধারণ সম্পাদক মিহির কান্তি ত্রিপুরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ত্রিপুরাব্দ উদযাপন কমিটির সদস্যসচিব খোকন বিকাশ ত্রিপুরা। বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক শাখার সভাপতি বিপ্লব ত্রিপুরার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদের কেন্দ্রীয় কিমিটির সভাপতি সুশীল জীবন ত্রিপুরা।
এ ছাড়া ত্রিং ফেস্টিভ্যালে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্যবিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পুরস্কারপ্রাপ্ত মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা এবং লেখক-গবেষক অবসরপ্রাপ্ত যশোবর্ধন ত্রিপুরা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ৫৯০ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জাতির ত্রিপুরাব্দ বা ত্রিপুরা সনের প্রচলন হয়। হামতরফা ১৮৮তম ত্রিপুরা মহারাজা ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তবর্তী রাজ্য বঙ্গের শাসককে পরাজিত করে কিছু অংশ নিজের নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য মহারাজ হিমতি ত্রিপুরাব্দ প্রবর্তন করেন। যশোবর্ধন ত্রিপুরা বলেন, ত্রিং বা ত্রিপুরাব্দ পালিত হয় ১ তালহিং তারিখে। এর মধ্যে ত্রিপুরা জুমিয়াদের ফসল তোলার কাজ সম্পন্ন হয় এবং তারা নতুন জুম চাষের জন্য জায়গা খোঁজা শুরু করেন। তাই জুমচাষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এ দিনটিকে ত্রিপুরাব্দের প্রথম দিন বা বর্ষ শুরুর দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ত্রিপুরা জাতির বর্ষপঞ্জিকে ত্রিপুরাব্দ বা ত্রিপুরা সন বলা হয়। এই ত্রিপুরাব্দের সংক্ষিপ্ত রূপই ত্রিং।
ত্রিপুরা মহারাজাদের আমলে সমসাময়িক বহু অঞ্চলের ভূপতিরা ত্রিপুরাব্দকেই বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার করতেন। কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন দলিল-দস্তাবেজ যাচাই করলে এখনও ত্রিপুরাব্দের তারিখ ও সন পাওয়া যায়। ১৯৪৯ সালে স্বাধীন ত্রিপুরা রাজ্য ভারত সরকারের অন্তর্ভুক্ত হলে ত্রিপুরাব্দের ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়ে বলে জানান যশোবর্ধন ত্রিপুরা।