প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২৪ পিএম
‘সংস্কৃতির সংগ্রামে দ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির লড়াইয়ে অজেয় শক্তি’ স্লোগান সামনে রেখে ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। আগামী রবিবার (২৯ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিত্রশিল্পী ও চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন আবুল বারক আলভী।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, নিবাস দে, প্রবীর সরদার, জামসেদ আনোয়ার তপন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
বর্ষপূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হবে সমাজে বিরাজমান ঘুষ-দুর্নীতি, সিন্ডিকেটবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, লুটপাটতন্ত্রের বিরুদ্ধে উদীচীর নতুন প্রযোজনা ‘ধর ধর চোর চোর’। এছাড়াও থাকবে দেশ বরেণ্য শিল্পীদের একক সঙ্গীত, আবৃত্তি এবং নৃত্য পরিবেশন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-আত্মত্যাগের ধারাবাহিকতায় ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম। কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য ক্ষমতার হাতবদল ছাড়া সমষ্টিগত মানুষের মুক্তি মেলেনি। রাজনীতির মাঠে একদল সরকারে টিকে থাকা, আরেক দল সরকারে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এমন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী এবং সম্প্রসারণবাদী দেশগুলো ফন্দি আঁটছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায়ের। শুধু রাজনীতি নয়, অন্যান্য খাতেও আজ এক ভয়ানক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে জাতি। একদিকে উন্নয়নের নামে লুটপাট বাণিজ্য, অর্থপাচার, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি; অন্যদিকে পুঁজিবাদী অর্থনীতির গর্ভজাত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, মৌলবাদী গোষ্ঠীর তাণ্ডব জনজীবনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। প্রগতিশীল মুক্তমনের মানুষও একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছে, নিগৃহীত হচ্ছে তাদের নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে। মানুষের মানবিক মূল্যবোধ আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকার একের পর এক অগণতান্ত্রিক ও নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নানাস্তরের জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করে চলেছে। ধর্মীয় অনুভূতির দোহাই দিয়ে কথায় কথায় মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার-হয়রানির মাধ্যমে প্রকারন্তরে সাম্প্রদায়িক শক্তিকেই প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে অবকাঠামোগত প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হলেও মানুষের মানবিক ঋদ্ধির দিকে খুব একটা নজর দেওয়া হয়নি। প্রতিবছর বাজেটেই সংস্কৃতি খাতের বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে কমছে। অথচ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, ধর্মব্যবসা ও মৌলবাদকে রুখতে হলে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষিত মানবিক বোধসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হলে সাংস্কৃতিক জাগরণের বিকল্প নেই। দেশে যে অরাজকতা ও নৈরাজ্য চলছে তা থেকে মুক্তির উপায় সাংস্কৃতিক সংগ্রামকে বেগবান করে রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত করা। আর সেজন্যই উদীচী তার ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শ্লোগান নির্ধারণ করেছে, ‘সংস্কৃতির সংগ্রামে দ্রোহের দীপ্তি, মুক্তির লড়াইয়ে অজেয় শক্তি।’