× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চিত্রপ্রদর্শনী

সুলতানের অনন্য শিল্পভুবনে

আহমাদ শামীম

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩ ০৮:৫৮ এএম

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। এতে শিল্পকর্মের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে তার আঁকার উপকরণও। বৃহস্পতিবার তোলা। প্রবা ফটো

এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। এতে শিল্পকর্মের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে তার আঁকার উপকরণও। বৃহস্পতিবার তোলা। প্রবা ফটো

রঙতুলির আঁচড়ে তিনি তুলে এনেছেন গ্রামীণ বাংলার আনন্দলোক। সমকালের তরণীতে তিনি ভাসিয়ে দিয়েছেন আবহমান বাংলার জীবন ও সমাজ। তাঁর কাজে অনন্য রূপে উঠে এসেছে একান্তই আমাদের এই বাংলাদেশের ধ্রুপদ সত্তা। এই চিরভাস্বর শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ১৫তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর একটি গ্যালারি সাজানো হয়েছে তার চিরায়ত সব শিল্পকর্ম দিয়ে। 

১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট, চিত্রা নদীর পাশে নড়াইলের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্ম হয় সুলতানের। এ বছর তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ৫ নম্বর গ্যালারিতে চলছে বিশেষ এই চিত্রপ্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে রয়েছে একাডেমির নিজস্ব সংগ্রহে থাকা এস এম সুলতানের ২৬টি চিত্রকর্ম। এখানে আরও রয়েছে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের ক্যামেরায় তোলা সুলতানের বিভিন্ন সময়কার বেশ কিছু আলোকচিত্র। আছে তাঁকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত কিছু প্রকাশনা, সুলতানের ব্যবহৃত কিছু পোশাক, প্রিয় বাঁশি, ছবি আঁকার উপকরণসহ বিভিন্ন স্মৃতি-স্মারক।

গ্রামীণ জীবনের প্রতি শিল্পী এস এম সুলতানের ছিল অসীম সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও সারাজীবনই তিনি ছিলেন মাটির কাছাকাছি। নিজস্ব জনপদ আর জনজীবন ভালোবেসে সুলতান স্বপ্ন দেখতেন, এই দেশের মানুষ হবে অমিত শক্তি ও সাহসে ভরপুর। তার শিল্পচর্চার গতিপথেও উঠে এসেছে এই সত্য। তাঁর চিত্রকর্মে গ্রামীণ জীবনযাত্রার চালচিত্র, কৃষকদের বলশালী ও পেশিবহুল উপস্থিতি আমাদের নিজেদের সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে নতুন ভাবনা সৃষ্টি করে। তাঁর ছবিতে গ্রামীণ রমণীদেরও দেখা যায় সুডৌল ও সুঠাম গড়নে। নারীর চিরকালীন রূপলাবণ্যের সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন শক্তির নবরূপ।

সুলতান যেন তার দিব্যদৃষ্টি দিয়ে তেলরঙে, কখনও-বা জলরঙে ক্যানভাসে তুলে এনেছেন এই মৃত্তিকার মানুষের ভেতরের রূপ, রঙ ও শক্তি। তাদের ঘিরে তার নিজস্ব বিশ্বাসের কথাও তিনি বলেছেন নানা স্থানে, নানা প্রসঙ্গে। বলেছেন, ‘আমার ছবির মানুষরা, এরা তো মাটির মানুষ, মাটির সঙ্গে স্ট্রাগল করেই এরা বেঁচে থাকে। এদের শরীর যদি শুকনো থাকে, মনটা রোগা হয়, তাহলে এই যে কোটি কোটি টন মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় বস্তুসকল আসে কোত্থেকে? ওদের হাতেই তো এসবের জন্ম। শুকনো, শক্তিহীন শরীর হলে মাটির নিচে লাঙলটাই দাববে না এক ইঞ্চি। আসলে, মূল ব্যাপারটা হচ্ছে এনার্জি, সেটাই তো দরকার। ওই যে কৃষক, ওদের শরীরের অ্যানাটমি আর আমাদের ফিগারের অ্যানাটমি, দুটো দুই রকম। ওদের মাসল যদি অত শক্তিশালী না হয় তাহলে দেশটা দাঁড়িয়ে আছে কার ওপর? ওই পেশির ওপরেই তো আজকের টোটাল সভ্যতা।’ 

এস এম সুলতানের জন্মশতবর্ষের বিশেষ এই প্রদর্শনীতে শোভা পাওয়া চিত্রকর্মগুলো তাঁর চিরকালীন শিল্পদৃষ্টিরই প্রকাশ। চিত্রকর্মগুলোয় নানাভাবে উপস্থিত হয়েছে বাংলার নারী, গ্রামের নারী। এলোখোঁপায় হেঁটে যাওয়া নারী থেকে ঢোলের তালে নৃত্যের ছন্দে দুলতে থাকা নারীর উজ্জ্বল উপস্থিতি তার ক্যানভাসে। অলস সময়ে গ্রামীণ নারীদের চুল আঁচড়ানোর, ধান ওড়ানোর কিংবা মাড়াই করার দৃশ্য, সন্তানদের পাশে নিয়ে এক মায়ের মাছ কাটার দৃশ্যÑ এসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় অনন্য এক বাংলার কথা। 


পাশাপাশি এ প্রদর্শনীর শিল্পকর্মে রয়েছে চিরায়ত বলশালী কৃষকরা। তারা ধান কাটছে, কাঠের কাজ করছে, পলো কিংবা জাল হাতে মাছ ধরছে অনেকে, লাঙল কাঁধে গরু নিয়ে যাচ্ছে কাজে, ঘরে ফিরছে কাটা ধান নিয়ে। প্রদর্শনীতে রয়েছে এস এম সুলতানের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘প্রথম বৃক্ষরোপণ’। তেলরঙের শিল্পকর্মই বেশি। তবে পাশাপাশি আছে প্রাণ-প্রকৃতি ও জনজীবনের জলরঙা ছবিও।

নাসির আলী মামুনের তোলা সুলতানের ছবিগুলোয় অদেখা এক মানুষের দেখা মেলে। দেখতে পাই সুলতান কখনও সেতার বাজাচ্ছেন, কখনও-বা আঁকছেন ছবি। প্রিয় বিড়ালদের খাওয়াচ্ছেন, হারিকেনের আলোয় লিখছেন, কখনও বাঁশি বাজাচ্ছেন, কখনও আবার স্থানীয় বাজার থেকে করছেন সদাই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে এ প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন মোহাম্মদ আরমান। কথা হয় তার সঙ্গে। শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার বিভিন্ন হলে সমকালীন শিল্পীদের বিভিন্ন চিত্রমালার মধ্যে আরমানের ভালো লেগেছে সুলতানের এসব চিত্রকর্ম। তিনি বললেন, ‘শিল্পী এস এম সুলতানের ছবিগুলো সরল। আমাদের গ্রাম-বাংলার জীবনের ছবি এঁকেছেন তিনি। কিন্তু অন্যদের মতো করে না। সুলতানের ছবি আলাদা। তার আঁকা এতগুলো ছবি এর আগে দেখার সুযোগ পাইনি। এখানে এসে ভালো লেগেছে।’

বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমিতে প্রথম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী হয় ১৯৭৫ সালে। ঢাকায় প্রথমবারের মতো সুলতানের কাজ প্রদর্শিত হয় এই প্রদর্শনীর সুবাদে। পরের বছর ১৯৭৬ সালে সুলতানের একক প্রদর্শনী শিল্পকলা একাডেমি। এই একক প্রদর্শনীর পর দেশে সুলতানের শিল্পকর্মের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৪ সালে শিল্পকলা একাডেমির পক্ষ থেকে তাকে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’-এর সম্মানও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সংগ্রহে সুলতানের চিত্রকর্মগুলো কতটা যত্নে আছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু তারপরও এই প্রদর্শনীতে তার চিত্রমালা, ছবি আর ব্যবহৃত জিনিসের সামনে দাঁড়িয়ে অনন্য এক সুলতানকেই আবিষ্কার করবেন সবাই।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা