জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৩ ০০:৫৪ এএম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩ ১১:২১ এএম
প্রবা ফটো
চিত্রকর্ম, ভাস্কর্য আর স্থাপনা শিল্পে উঠে এসেছে নৈসর্গিক নান্দনিকতা থেকে ব্যস্ত জীবনের বাস্তবতা; সমকালীন বৈশ্বিক সংকটের কথা। আবহমান বাংলার মৃত্তিকালগ্ন মানুষ, নদী অববাহিকায় গ্রামীণ অর্থনীতি আর আটপৌরে শহুরে জীবনের নানা ইতিবৃত্ত উঠে এসেছে বহুমাত্রিক সেই শিল্পসম্ভারে।
প্রচলিত ধারার চিত্রকলার সমান্তরালে নিরীক্ষাধর্মী শিল্পকর্মের সম্ভার নিয়ে রবিবার (২৮ মে) ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর ২৫তম আসর। চিত্রকলা, ছাপচিত্র, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, প্রাচ্যকলা, মৃৎশিল্প, কারুশিল্প, নিউ মিডিয়া আর্ট, স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্টসহ ১১টি মাধ্যমে ২৬১ শিল্পীর ৩০১টি শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে।
এদিন সন্ধ্যায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ আয়োজনের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান ও সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাহবুবা করিম। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার সাতটি গ্যালারিতে দেড় মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার উন্মুক্ত প্রদর্শনী।
২৫তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সব মাধ্যম থেকে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে একজনকে ২ লাখ টাকা মূল্যমানের গ্র্যান্ড পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১১টি মাধ্যমের প্রতিটি থেকে একটি করে ১ লাখ টাকা মূল্যমানের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দেওয়া হয়। ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের পাঁচটি সম্মানসূচক পুরস্কারও দেওয়া হয়।
স্থাপনাশিল্প গড়ে সব মাধ্যমের শ্রেষ্ঠ হিসেবে গ্র্যান্ড পুরস্কারটি জিতেছেন জেসমিন আক্তার। চিত্রকলা বিভাগে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছেন জয়তু চাকমা। ভাস্কর্য মাধ্যমে সৈয়দ তারেক রহমান, স্থাপনাশিল্পে সঞ্জীব কুমার দে, ছাপচিত্রে নুসরাত জাহান, গ্রাফিক ডিজাইনে জিহাদ রাব্বি, কারুকলায় ফারহানা ফেরদৌসী, মৃৎশিল্পে অসীম হালদার, আলোকচিত্রে মো. আসাদুর জামান আসলাম মোল্লা ও পারফরম্যান্স আর্টে মাহাবুবুর রহমান শ্রেষ্ঠ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে তাদের অর্থমূল্যের সম্মানি এবং স্মারক ও সনদ দেওয়া হয়।
এবারের আসরে সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন আবদুস সাত্তার, নাঈমা আখতার, রাউফুন নাহার রিতু, মো. তরিকুল ইসলাম ও আশরাফুল হাসান।
আরও পাঁচটি পুরস্কারের মধ্যে ফারেহা জেবা পেয়েছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশন পুরস্কার, অনুকূলচন্দ্র মজুমদার পেয়েছেন শিল্পী কালিদাস কর্মকার পুরস্কার, মোহাম্মদ হাসানুর রহমান পেয়েছেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, তানভীর পারভেজ পেয়েছেন ভাষাশহীদ গাজিউল হক পুরস্কার ও গোবিন্দ পাল পেয়েছেন চিত্রশিল্পী কাজী আনোয়ার হোসেন পুরস্কার।
বর্ণিল রঙ আশ্রিত তিনটি ছবির একটি কোলাজ ফ্রেমে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার এক নারী ছবি এঁকেছেন জয়তু চাকমা। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের সংকটসহ সেই জনপদের প্রাণ ও প্রকৃতিবিনাশী অপতৎপরতার ধারাভাষ্য হয়ে উঠেছে ‘নির্বাপিত’ শিরোনামের চিত্রকর্মটিতে। ক্যানভাসে শীতলপাটির মাঝে নকশাদার হাতপাখা ও হ্যাজাক বাতি এঁকে শৈশবের স্মৃতি খুঁজে ফিরেছেন সামিনা নাফিজ। ‘সবুজের চিতা’ শিরোনামের ছবিতে বৃক্ষ ও তার ডালপালার মাঝে মানবশরীরের অবয়ব মেলে ধরেছেন আশরাফুল হাসান।
‘স্বাধীনতার মৃত্যুঞ্জয়ী কবি’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে নিপুণ দক্ষতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মেলে ধরেছেন এসএম মিজানুর রহমান। ‘লিভিং ইন ওয়াটার’ শিরোনামে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাশিল্পের জলে ভেসে থাকা জীবনের গল্প বলেছেন বিলাস মণ্ডল।
নানা শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পরসিকদের হৃদয় রাঙাচ্ছে ছয়টি কিউরেটেড কাজ। এর মধ্যে শিল্পপ্রেমীদের নজর কাড়ছে পথিকৃৎ চিত্রকর এসএম সুলতানের চিত্রকর্ম এবং তার আলোকচিত্র ও ব্যবহার্য পণ্য নিয়ে ৫ নম্বর গ্যালারির প্রদর্শনী।