প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ মে ২০২৩ ১৯:৩০ পিএম
বাংলাদেশের বিভিন্ন বস্তুগত ও অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার ২০০৬ সালে যে জাতীয় সংস্কৃতি নীতি প্রণয়ন করেছে, তা সম্পূর্ণরূপে অবান্তর এবং অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পকলা পদকপ্রাপ্ত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লুবনা মারিয়াম।
তিনি বলেন, গত দুই দশকে সরকার এক চেটিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। সাংস্কৃতিক খাতের জন্য জাতীয় বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৯৫ শতাংশ বরাদ্দ। সেই অর্থও কেবল মুষ্টিমেয় স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল (অবঃ) কাজী নূর-উজ্জামানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার নামাঙ্কিত ট্রাস্টের উদ্যোগে শনিবার (২০ মে) বিকালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত স্মারক বক্তৃতার প্রধান বক্তা ছিলেন কাজী নূর-উজ্জামানের মেয়ে এবং নৃত্য ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা লুবনা মারিয়াম। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
লুবনা মারিয়াম বলেন, জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের কথা বাংলাদেশের সংবিধানে রয়েছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ ইউনেস্কো কনভেনশন ফর সেফগার্ডিং অফ ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ (আইসিএইচ-২০০৩)- এ স্বাক্ষর করেছে ২০০৯ সালে। তবে বাস্তবে সুরক্ষার জন্য অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ নীতিমালার বাস্তবায়ন থেকে অনেক দূরে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সংস্কৃতি বিশ্ব রাজনৈতিক আলোচনার বিষয়সূচিতে বিশিষ্টভাবে স্থান পেলেও প্রগতি ও উন্নয়নের চিন্তাভাবনায় এখনও সাংস্কৃতিক অবদানের ধারণাগুলো খুবই ধীর গতিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সার্বজনীন কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতির গুরুত্ব ক্রমে বাড়ছে এবং উন্নয়নের প্রক্রিয়ার জন্য অর্থনীতি বা রাজনীতির মতোই সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ চিত্র বুঝে নিতে সম্পূর্ণ সক্ষম নয়। এর দুটো কারণ; এক- সংস্কৃতির ধারণার ব্যবহারে বৌদ্ধিক অস্পষ্টতা এবং দুই-আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ স্থাপনের সূচনা পর্বে, নানান ভূ-রাজনৈতিক, আলোচনার ফলে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, বিভিন্ন দেশের জাতীয় মন্ত্রণালয়সমূহ এবং আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মধ্যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংস্কৃতির বিভাজন।
দারিদ্র্য, লিঙ্গ বৈষম্য, রাজনৈতিক দমন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সাংস্কৃতিক অসঙ্গতিগুলো বিবেচনায় না নিলে সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোনো আলোচনাই সম্পূর্ণ হয় না বলে স্মারক বক্তৃতায় উল্লেখ করেন তিনি।
কাঠামোগত প্রাতিষ্ঠানিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তার অভাবে সমগ্র সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র সম্পদহীন হয়ে হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে উল্লেখ করে এর কারণ ব্যাখ্যায় লুবনা মারিয়াম বলেন, প্রাথমিক কারণগুলো হলো-দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংস্কৃতির অবদানের সঠিক তথ্যের অভাব, সাংস্কৃতিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রযুক্তি সক্ষমতার ঘাটতি এবং সরকার এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় ও সহযোগিতার অভাব।