প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৩ ২০:০৯ পিএম
আপডেট : ১২ মে ২০২৩ ২০:৩৯ পিএম
রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের ৩৪তম আসরে সংগীত শিল্পীরা। প্রবা ফটো
প্রখর দাবদাহে ওষ্ঠাগত প্রাণ যেন বিপুল তৃষ্ণা নিয়ে গাইলেন রবীন্দ্রনাথের গান ‘দারুণ অগ্নিবাণে রে’। রোদ সরে গিয়ে নগরের আকাশে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। চাতকের মতো অধীর অপেক্ষা কখন আসবে বৃষ্টি। সেই সময় ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সবুজাভ প্রাঙ্গণে সম্মিলিত কণ্ঠে শিল্পীরা গানে কৃপাভিক্ষা চাইলেন স্রষ্টার—‘আমার মাথা নত করে দাও হে’। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবের ৩৪তম এই আসর শুরু হয় শুক্রবার (১২ মে) সকালে। চলবে দিনভর।
‘করিস নে লাজ, করিস নে ভয়/ আপনাকে তুই করে নে জয়’—রবীন্দ্রনাথের এই অমিয় বাণী ধারণ করে শুরু হয় ৩৪তম আসর। বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার নির্বাহী সভাপতি আমিনা আহমেদ প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে উৎসবের সূচনা করেন। প্রথমে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যনন্দনের শিল্পীরা। এরপর উপস্থিত সবাই রবীন্দ্রসংগীত গাইতে গাইতে মিলনায়তনে প্রবেশ করেন।
মিলনায়তনের মূল মঞ্চে ১৬২তম রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এ উৎসবের মূলপর্ব শুরু হয় দলীয় পরিবেশনায় জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী পীযূষ বড়ুয়া এবং সভাপতির বক্তব্য দেন আমিনা আহমেদ। বিকালে একই ভেন্যুতে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা সম্মাননা দেয় গিটার শিল্পী এনামুল কবীর ও বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী লিলি ইসলামকে। শনিবার বিকাল ৫টায় একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান হবে। সম্মিলিত ও একক সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি থাকবে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি।
‘সকালের খবরের কাগজ—বিশেষায়িত সংগীতসন্ধ্যা’
বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের সুরারোপিত আধুনিক গান নিয়ে শুক্রবার বিকালে শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করা হয় ‘সকালের খবরের কাগজ—বিশেষায়িত সংগীতসন্ধ্যা’। এই নামকরণ সম্পর্কে বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘সকালের খবরের কাগজের সংবাদগুলো যেমন দিনের মধ্যভাগে এসে পাঠকের কাছে আবেদন হারিয়ে ফেলে, তেমনি হালের আধুনিক গানের আবেদনও ফুরিয়ে যায়। বহু আধুনিক গান শ্রোতা একবার শুনে আর শুনতে চান না।’ তাই বিভিন্ন সময় সাড়া জাগানো আধুনিক গান নিয়ে এই নামে তারা গানের আসর সাজান।
সপ্তাহব্যাপী সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব
বাংলাদেশ ও ভারতের ১৭টি নাট্যদলের অংশগ্রহণে শুক্রবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী 'সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইন স্মৃতি নাট্যোৎসব'। ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, কলামিস্ট, নাট্যকার সৈয়দ বদরুদ্দীন হোসাইনের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘সুন্দরের তীর্থ পথে শতবর্ষ পরেও তাহারে আমরা পরম পাথেয় মানি’ শিরোনামে আয়োজন করা হয়েছে এবারের উৎসব। উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, ম. হামিদ, পদাতিক সভাপতি সৈয়দ তাসনিন হোসেন তানু। উদ্বোধনী আসরে চারজন নাট্যব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানানো হয়। তারা হলেন, বঙ্গজিৎ দত্ত (মরণোত্তর), দেবপ্রসাদ দেবনাথ, মাসুম আজিজ (মরণোত্তর) ও তারিক আনাম খান।
শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলন আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে প্রসারিত করে, যা কিনা বিশ্ব সংস্কৃতির অঙ্গনে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের নাটক অগ্রগামী। বাংলাদেশের মঞ্চনাটকে যার জুড়ি মেলা ভার।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সংস্কৃতিচর্চার সংকট নিয়ে কথা বলেন মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় পল্লবী থেকে বাংলামটর পর্যন্ত কোনো লাইব্রেরি নেই। এ এলাকাগুলোতে নাটক করার জন্য যথাযথ মঞ্চ নেই। শুধু তাই নয়, শিল্পকলা একাডেমি দেশজুড়ে যে মঞ্চগুলো করেছে, সেগুলো অভিনয় উপযোগী নয়। শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় নাট্যশালা ও এক্সপেরিমেন্টাল হলে লাইটের সমস্যা রয়েছে। সাউন্ডের সমস্যা রয়েছে। আমাদের পাঠ করার জায়গা না থাকলে, অভিনয়ের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেলে মানুষের মূল্যবোধ কীভাবে গড়ে উঠবে?’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে মঞ্চস্থ হয় সুন্দরম প্রযোজিত নাটক 'নৈশব্দ্যে ৭১', এক্সপেরিমেন্টালে পদাতিক নাট্য সংসদের ‘পাকে বিপাকে' ও স্টুডিও থিয়েটারে ভারতের কসবা অর্ঘের নাটক ‘ম্যাকবেথ বাদ্য।’ এবার উৎসবে অংশ নিচ্ছে নাট্যকেন্দ্র, আরণ্যক, প্রাচ্যনাট, লোকনাট্য দল, সুন্দরম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগ, অনুস্বর, থিয়েটার ফ্যাক্টরি, শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্র, বটতলা, নাট্যম রেপার্টরি, ম্যাড থেটার, ঢাকা পদাতিক, ভারতের চাকদাহ নাট্যজন, কসবা অর্ঘ, টেন্থ প্ল্যানেট থিয়েটার গ্রুপ, বাগুইহাটি নৃত্যমন্দির।