প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:১৩ পিএম
ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সন্জীদা খাতুন। প্রবা ফটো
সর্বান্তকরণে শুদ্ধ বাঙালি হওয়ার ব্রত নিয়ে আবহমান বাংলার সংস্কৃতির ধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রে এখনও সচল ও সক্রিয়। তার হাতে গড়া ছায়ানট, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ও নালন্দা বাংলা ভাষা-সাহিত্য- সংস্কৃতির সুস্থ ধারা এবং মানবিক সমাজ গড়ায় আগ্রহী। তিনি সন্জীদা খাতুন।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট মিলনায়তনে এসে সংস্কৃতিজনরা নবতীপূর্ণা সন্জীদা খাতুনের ৯১তম জন্মদিনের আয়োজনে এসে শংসাবচনে এভাবেই তুলে ধরেন কীর্তিময়ীর জীবনগাথা।
শৈশবের এক ঘটনার স্মৃতিচারণ করে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘ছেলেবেলায় ইজিচেয়ারের বাতিল হয়ে যাওয়া কাপড় বিছিয়ে নানীর দেখাদেখি নামাজের ভঙ্গি করতাম। আর কিছুই জানা ছিল না বলে মুখে আল্লাহ আল্লাহ বলতে থাকতাম। মোনাজাতে অনেক কিছু চাইতাম আল্লার কাছে। কিছুদিন পরেই মনে ধিক্কার এলো নিজের জন্যে এটা ওটা চাইব কেন? ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ছেড়ে অন্য সবার মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করতে আরম্ভ করলাম। সেই থেকেই সবার ভালো চাইবার দিকে মন গেল। আমার মা ভিখারিকে কিছু দেবার কাজটি আমাদের দিয়ে করাতেন। বলতেন, তাতে গরিব মানুষদের প্রতি আমাদের মনে মায়া মমতা জন্মাবে। এ শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসবার মানসিকতা গড়ে দিয়েছিল বাল্যকাল থেকে।’
কথনের মাঝে সন্জীদা খাতুন গাইলেন তার শৈশবে শেখা প্রিয় গান 'তৃষ্ণার জল এসো এসো হে'।
কথাপ্রসঙ্গে ছায়ানটের 'শ্রোতার আসর'; গানের শিক্ষা, সাধনা আর প্রসারে কাজ, আরও পরে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন ও নালন্দার যাত্রার ইতিহাসও শোনান সন্জীদা খাতুন।
ছায়ানট মিলনায়তনে তখন পিনপতন নীরবতা। মুগ্ধ শ্রোতা তন্ময় তখন নবতিপূর্ণা কথনে
সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘সেই- যে ছেলেবেলায় সবার মঙ্গলসাধনের ইচ্ছা তা পূর্ণ হতে পেরেছে এইভাবে। শিশুদের জন্যে, দেশের জন্যে বাঙালি জাতির জন্যে কাজ করে আমার জীবনটা অর্থবহ হয়েছে বলে মনে করি। অল্পে তুষ্ট সহজ-সরল জীবনের এই সার্থকতায় আমি ধন্য হয়েছি।’
কথন পর্বে ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘আজ সন্জীদা খাতুন, আমাদের প্রিয় মিনু আপার নব্বই বছর পূর্ণ হলো। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, বয়সের কারণে দেহ কিছুটা অসমর্থ হলেও বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা ও চিন্তাধারার ক্ষেত্রে তিনি সচল ও সক্রিয় রয়েছেন। মুক্তচিন্তা ও সঙ্গীতের পারিবারিক পরিবেশে বেড়ে ওঠা সনজীদা খাতুন সর্বজন যেন বাঙালি জাতিসত্ত্বাকে হৃদয়ে ধারণ করে বিশ্বমানব হয়ে ওঠে, তার সাধনা করে চলেছেন। স্থির প্রত্যয়ের এই যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। কিন্তু, তিনি লক্ষ্য অর্জনে সর্বদা আপন সিদ্ধান্তে অবিচল রয়েছেন।
অভিজিৎ কুণ্ডুর কণ্ঠে ধ্রুপদ সংগীতে শুরু হওয়া জন্মদিনের এ আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করেন ফাহমিদা খাতুন, চন্দনা মজুমদার, শারমিন সাথী ইসলাম, ইফফাত আরা দেওয়ান, লাইসা আহমেদ লিসা, ফারহানা আক্তার শার্লি, সুমন মজুমদার। ছায়ানটের মনিপুরীও ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পীরা মঞ্চে পারফর্ম করেন এদিন । ছিলো শিশুকণ্ঠে সম্মেলক সংগীত পরিবেশনা।
সন্জীদা খাতুন অবিভক্ত ভারতবর্ষে ৪ এপ্রিল ১৯৩৩ সালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার পিতা বিখ্যাত পন্ডিত ড. কাজী মোতাহার হোসেন।