প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:১০ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৩ ১৭:২১ পিএম
সংবাদ আলোকচিত্রী কাকলী প্রধানের ক্যামেরায় তিস্তা নদী। ছবি : সংগৃহীত
নদীকে জীবনসত্তা ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। নদীর প্রাণ আছে, সেই প্রাণকে হত্যা করা হচ্ছে শ্বাস রোধ করে। বিলুপ্ত হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী। কয়েক দশকে উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের জনপদে নদীর দৃশ্যপট বদলে গেছে। মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে উত্তর জনপদ। কোথাও কোথাও নদী পুরোটাই উধাও। প্রায় দুই দশকে ক্যামেরার লেন্সে নদীকে হত্যার এ নৃশংসতা তুলে এনেছেন সংবাদ আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান।
নদী ও নদীকে আঁকড়ে বেঁচে থাকা মানুষের জীবনযাপন নিয়ে ‘নদীর প্রাণ আছে, তাকে বাঁচতে দাও’ শিরোনামে ১০০ নদীর আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৩টায় খুলনায় রূপসা সেতুর নিচে (টোলঘাট) উদ্বোধন হবে প্রদর্শনীটি। চলবে রবিবার পর্যন্ত।
এটি হতে যাচ্ছে নদী নিয়ে ধারাবাহিক প্রদর্শনীর দ্বিতীয় পর্ব। এর আগে টেকনাফে ‘নদী নেবে!’ শিরোনামে প্রথম পর্বের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
প্রদর্শনী প্রধান অতিথি থেকে বিকাল ৩টায় উদ্বোধন করবেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। আয়োজনে বিশেষ অতিথি থাকবেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।
দখল-দূষণে নিত্য শিকার বাংলাদেশের নদনদী। অথচ নদী শুধু দেশের প্রাণই নয়, সচল রেখেছে অর্থনীতিও। বাংলাদেশের মতো ভাটি অঞ্চলে নদী যেন অবতীর্ণ হয়েছে মায়ের ভূমিকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রবহমান নদীর গুরুত্ব অপরিসীম।
আয়োজকরা জানান, সংবাদ আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান এবং শিশু সংগঠন ইকরিমিকরি সাধারণ মানুষের কাছে নদীর বিপন্নতা ও শিশুদের কাছে নদীর রূপ, প্রকৃতি তুলে ধরার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। শিশুদের মাসিক পত্রিকা ইকরিমিকরিতে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে নদীর ছবি ও লেখা।
‘নদী নেবে!’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে শিশুদের উপযোগী দুটি নদীর বই। ৩২টি নদীর ছবির সুদৃশ্য কার্ডও বেরিয়েছে সম্প্রতি। নদী নিয়ে আগামীতে আসছে আরও নানান কার্যক্রম।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এক দশকে হারিয়ে যাওয়া বা অর্ধমৃত বেশ কয়েকটি নদীকে স্বরূপে ফিরিয়ে এনেছে তারা। ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ফরিদপুরের কুমার, কুষ্টিয়ার গড়াই ফিরে পাওয়া যৌবনে উচ্ছলিত।
সংস্থাটি জানায়, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই সাতটি ড্রেজার সংগ্রহ করে নদী খননের কাজ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার বিভিন্ন সময়ে আরও ২৭টি ড্রেজার কেনে। শিগগিরই আরও অন্তত ৩৫টি ড্রেজার যুক্ত করার মধ্য দিয়ে ৮০টি ড্রেজার হবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের।
নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, দেশের ১৭৮টি নদনদীতে বর্তমান সরকারের ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। নদী বাঁচাতে বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ দখল উচ্ছেদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পুনঃখনন ও দখল উচ্ছেদের মাধ্যমে হারানো নৌপথ যেমন ফিরে পাওয়া যাচ্ছে, তেমন দেশ ফিরছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের আপন মানচিত্রে।
প্রদর্শনী সম্পর্কে আলোকচিত্রী কাকলী প্রধান বলেন, ‘প্রায় দুই দশকে আমার ক্যামেরার লেন্সে নদীকে হত্যার নৃশংসতা যেমন উঠে এসেছে, তেমনি লেন্সে ধরতে চেয়েছি নদী অবলম্বন করে বেঁচে থাকা মানুষের যাপন। নদীর রূপ। লেন্সে নদীর সেই রূপের ছটাও উছলে পড়ছে খানিকটা। নদীমাতৃক দেশে নদী হোক মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন। নদী ঘিরে গড়ে উঠুক সুস্থ নদী পর্যটন।’