প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৫৭ পিএম
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:১৬ পিএম
অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২৩ শুরুর আগে বাংলা একাডেমির কর্তৃত্ব নিয়ে সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুরের সাম্প্রতিক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকালে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা উদ্বেগের কথা জানান।
বিবৃতিতে সংস্কৃতিকর্মীরা জানান, বাংলা একাডেমি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও সংস্কৃতি সচিব সম্প্রতি বইমেলাসংক্রান্ত একটি সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। তার এ ব্যবহার বাংলা একাডেমির কর্মকাণ্ডে ‘আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ’।
এক সভায় গ্রন্থমেলা আয়োজনের বিষয়ে বাংলা একাডেমির স্বায়ত্তশাসন নিয়ে কথা উঠলে সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর বলেন, ‘কীসের স্বায়ত্তশাসন! আপনারা সবাই মন্ত্রণালয়ের অধীন। আপনারা যদি সের হন, মন্ত্রণালয় সোয়া সের।’
এর প্রতিবাদে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, কবি শামীম আজাদ, কবি-প্রাবন্ধিক হাফিজ রশিদ খান, কবি ফেরদৌস নাহার, খালেদ হোসাইন, শামীম রেজা, কবি শোয়াইব জিবরান, হেনরী স্বপন, শামীম শাহান, শাহেদ কায়েস, কাজল কানন, আহমেদ শিপলু, সাকিরা পারভীন, অতনু তিয়াস, অরবিন্দ চক্রবর্তী, মীর রবি, শরাফত হোসেন, শারমিনুর নাহার, হাসান হামিদ, সাংবাদিক রাজীব নূর, প্রাবন্ধিক লোপা মমতাজ, গল্পকার হাবিবুল্লাহ ফাহাদ।
বিবৃতিতে তারা জানান, বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজক হিসেবে কার্ড ছাপানোর পর তা পরিবর্তন করে আয়োজকের স্থলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আবুল মনসুর। তখন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমিকে একক আয়োজক দাবি করলেও তাতে উষ্মা প্রকাশ করেন সংস্কৃতি সচিব।
আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সভায় বক্তব্যে বলেন, ‘কীসের স্বায়ত্তশাসন! আপনারা সবাই মন্ত্রণালয়ের অধীন। আপনারা যদি সের হন, মন্ত্রণালয় সোয়া সের।’
২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বাংলা একাডেমি আইনের ৩-এর ২ ধারা মোতাবেক, বাংলা একাডেমি একটি সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবে কার্যনির্বাহী পরিষদ। এই পরিষদে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সদস্য থাকবে।
এ ছাড়া থাকবে একাডেমির মহাপরিচালকসহ শিক্ষা-শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের অন্য সদস্যরা।
বিবৃতিতে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব একাডেমির অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। সম্প্রতি সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুর বাংলা একাডেমিতে গিয়ে একাডেমির কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন, বইমেলাকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে নিতে চেয়েছেন। তার এই অসৌজন্যমূলক আচরণে আমরা স্তম্ভিত, মর্মাহত। সচিব কার্যত মহান সংসদে পাসকৃত আইন লঙ্ঘন করেছেন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে সচিব আবুল মনসুরকে অপসারণের দাবি জানিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা বলেন, ‘শিল্প-সাহিত্যে আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ চলবে না। আমরা চাই না ভবিষ্যতে বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ হোক। আমরা চাই ইতিহাস-ঐতিহ্যবাহী, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাংলা একাডেমির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকুক।’
এ বিষয়ে জানতে সংস্কৃতি সচিব আবুল মনসুরকে ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।