প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৪ পিএম
আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:১৬ পিএম
আবদুলরাজাক গুরনাহ। ফাইল ছবি
নাগরিক জীবনের সুখ-দুঃখের নানা অধ্যায়, যাপিত জীবনের নানা চালচিত্র নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলেন নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আবদুলরাজাক গুরনাহ। পরবর্তী সময়ে মানুষের ওপর মানুষের নিপীড়ন, শোষণ ও নির্মমতার নানা গল্প তাকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এরপর থেকে সেসব গল্পই উপজীব্য হয়ে ওঠে গুরনাহর কালজয়ী সব গল্প, উপন্যাসে। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে নিজের শৈশব, পড়াশোনা ও লেখালেখিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এই সাহিত্যিক। বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘ডিজারশন’ শিরোনামে সেশনটি সঞ্চালনা করেন তারই একাধিক বইয়ের সম্পাদক আলেক্সান্দ্রা প্রিংগেল।
আবদুলরাজাক গুরনাহ বলেন, ‘আমি সেই সময় সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করেছিলাম, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছু না বলেই। সেই সময়ের নাগরিক অধিকার নিয়ে লিখতাম, শিক্ষার পাশাপাশি অন্যান্য স্বাধীনতা নিয়েও লিখতাম। আরেকটি বিষয় নিয়ে লিখতাম যে, একজনের সঙ্গে আরেকজনের এত নির্মমতা কেন! আমি কিছু মানুষকে জানতাম যাদের সঙ্গে এমনটা করা হয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরার চেষ্টায় ছিলাম।’
২০২১ সালে সাহিত্যে নোবেলজয়ী এই সাহিত্যিক আলাপচারিতায় বলেন, ‘ছোটবেলায় পড়ার মতো তেমন বই পাইনি। স্কুলের পাঠ্যবই থেকেই আমার পড়ার ক্ষুধা মেটাতাম। ভূগোল ক্লাসে শিক্ষক যখন প্রশ্ন করতেন, আমি সব উত্তর পারতাম। কারণ আমি ভূগোল মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। ধীরে ধীরে যখন লিখতে শুরু করলাম, তখন নিজের লেখা প্রকাশের বিষয়েও কোনো ধারণা ছিল না।’
যুক্তরাজ্যে নিজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেখানকার মানুষ কোনো কিছু বলার আগে চিন্তা করে না। অসংবেদনশীল, নির্মম শব্দ ব্যবহার করত। মুখের ওপর বাজে কথা বলে দিত এবং কোনো অনুশোচনাবোধ ছিল না। অসচেতনতায় কেউ বর্ণবাদী আচরণ করলেও সেটির অন্য রকম অর্থ মনে হত।’
ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনের আসরে সাহিত্যের পাশাপাশি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, প্রকাশনা শিল্প নিয়ে নানা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা একাডেমির লনে ‘বিশ্বায়নের কালে ভবিষ্যতের কবিতা’ শিরোনামে সেশনটি সঞ্চালনা করেন কবি আসাদ জুয়েল। আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা ও পশ্চিমবঙ্গের কবি গৌতম গুহ রায়। আলোচনায় কবি ও কবিতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে কারা কবিতা পড়বেন, ভবিষ্যতের কবিতায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রভাব কতটুকু থাকবে—সে প্রসঙ্গও উঠে আসে কবিদের বক্তব্যে।
মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বাংলাকে আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর শক্তিশালী ভাষা। একটা সময় বোধহয় ১০টি ভাষার মধ্যে বাংলা দুই-তিনের মধ্যে থাকবে। আমাদের যা কিছু লিখেছি, সব অনুবাদ করে বিশ্বের সামনে আনতে হবে। তার মানে এই নয় নিজের ভাষাকে ভুলে যেতে হবে।’
‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র’ বিষয়ে আলোচনা করেন অভিনয় শিল্পী ইরেশ জাকের, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহিন সুলতান, ব্র্যাক জেন্ডার, জাস্টিজ ও ডাইভারসিটি প্রোগ্রামের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, অভিনয় শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন, তাকবীর হুদা ও আইনজীবী তাসাফফি হোসেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অভিনেত্রী বন্যা মির্জা।
ইরেশ যাকের বলেন, ‘পুরুষত্ব বনাম পুরুষতন্ত্র হবে কেন? পুরুষ হিসেবে আমার আচরণ, অভিব্যক্তি, কথাবার্তা এসব সমাজ থেকেই গড়ে উঠেছে। এজন্য এমন আলোচনা করতে হচ্ছে। কিন্তু এই বনাম আলোচনাটাই দুঃখজনক বলে মনে করি আমি।’
নবনীতা চৌধুরী বলেন, ‘পুরুষতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্যে রাজনীতি তো আছেই। সবচেয়ে বড় রাজনীতি হলো কে বেশি পাবে। নারী-পুরুষের বাইরে অন্য লিঙ্গের কথা ভাবলেও দেখা যায় পুরুষ শক্তিশালী। যেমন একজন আমি যতই যোগ্য, কর্মজীবী, সফল হই না কেন, রাস্তায় চলাচলের সময় একেবারে প্রান্তিক কোনো পুরুষও আমাকে চিমটি কেটে যেতে পারেন। অন্যদিকে তিনি চাইলেই ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারেন।’
আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‘আমার চোখে দেখি, পরিবর্তন বাহ্যিকভাবে হচ্ছে। কিন্তু ভেতরে যা ছিল, তাই। আর কাস্টিং কাউচের শুধু মেয়েরা না, ছেলেরাও শিকার হয়। নারীদের পারিশ্রমিকে শুধু মিডিয়া নয়, সবক্ষেত্রেই বৈষম্য আছে। তাই যতই প্রতিবাদ হোক, পরিবর্তন হচ্ছে কেবল সারফেস লেভেলে। ভেতরে ভেতরে আমরা আরও নষ্টের দিকে যাচ্ছি।’