ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:৩৯ পিএম
গান, আলোচনা, নৃত্য ও কবিতায় আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফের ৫৯তম জন্মদিন উদযাপন। ছবি: প্রবা
আবৃত্তিশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান আরিফের ৫৯তম জন্মদিনে গান, আলোচনা, নৃত্য ও কবিতায় তাকে স্মরণ করেছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও তার স্বজনরা।
হাসান আরিফ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘হাসান আরিফ, অন্তরে মম’ প্রতিপাদ্যে বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলার বকুলতলায় এক আনন্দানুষ্ঠানে হাসান আরিফকে স্মরণ করেন তারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নৃত্য ও প্রদীপ প্রজ্বলন করে তাকে স্মরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে হাসান আরিফকে স্মৃতিচারণ করেন- সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে. এম. খালিদ, মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ঢাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহ্সহ তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরা।
আলোচনায় কে. এম. খালিদ বলেন, ‘আজকে নিদারুণ বেদনার মাঝে হাসান আরিফের জন্মদিন পালন করতে যাচ্ছি। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। হাসান আরিফের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর। জাতীয় জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠানে হাসান আরিফের কবিতা আবৃত্তি শুনে আমি শুধু মুগ্ধই হইনি আমি চমৎকৃতও হয়েছিলাম। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার সখ্য। এরপর থেকে যখনি কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো এবং আবৃত্তির বিষয় থাকতো তখনই আমি হাসান আরিফকে সেখানে চাইতাম। তাকে হারানোর মাধ্যমে আমি আবৃত্তি শোনার আগ্রহও হারিয়েছি খানিকটা।’
অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘মাটির প্রতি, দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি ও মূলধারার রাজনীতির প্রতি তার যে প্রেম সেটা আমরা বহন করে নিয়ে যাব-তার জন্মদিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি, ধর্মান্ধ শক্তির মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে আমাদের সমাজে, এদের বিরুদ্ধে হাসান আরিফের যে মন্ত্র ছিলো সেটা ধারণ করে আমরা এগিয়ে যাব। হাসান আরিফ মানুষের প্রাণে প্রাণে ছড়িয়ে পড়ুক।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা মুখে বলছি যে তার জন্মদিন উদযাপন করছি কিন্তু অন্তরে বেদনার ছাঁয়া। আরিফের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন, যে ভালোবাসায় কোনো খাঁদ নেই। এই ভালোবাসার কারণে হাসান আরিফ অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। যেকোনো দুঃসময়ে তিনি মেরুদণ্ড টান করে দাঁড়িয়ে যেতেন, সেটা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হোক, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে হোক বা যেকোনো অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে হোক না কেন।’
মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘সাংস্কৃতিক জাগরণে আমরা অনেকভাবে হাসান আরিফের কাছে ঋণী ও দায়বদ্ধ। তিনি সহজে প্রান্তিক মানুষের কাছে সহজে তার জায়গা করে নিতে পারতেন। তাই হাসান আরিফ রয়ে গেছে, হাসান আরিফ আছে এবং হাসান আরিফকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের অনেক দায়বদ্ধতা আছে।’
মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, ‘আরিফ সংগ্রাম ও শিল্পকে একীভূত করতে পেরেছিলেন। এবং সেই শিল্পের প্রেমে সারাটা জীবন ডুবে ছিলেন। এক সংগ্রামী আরিফ, শিল্পী আরিফ এবং প্রেমিক আরিফ এই সবকিছু মিলিয়ে আরিফ আমাদের সংস্কৃতিতে আইকন হয়ে রয়েছে।’
হাসান আরিফের বোন রাবেয়া রওশন তুলি বলেন, ‘আজ এই অনুষ্ঠানটি উৎসবমুখর মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটি উৎসব না বরং আরিফকে আমরা মৃত্যর মধ্যদিয়ে বিলিয়ে দিলাম। ও হারিয়ে গেল। আজকে ওকে হারানোর বোধ হচ্ছে আমার। যেখানেই থাকিস না কেন ভাই, ভালো থাকিস।’
আলোচনা শেষে গান, নৃত্য, লোকগান, বাউল গান, গণসংগীত, বিনোদিনী নাটকের অংশবিশেষ পরিবেশন, দলীয় আবৃত্তি ও একক আবৃত্তি পরিবেশিত হয়।