মানবিক সহায়তা কামনা
হাসনাত মোবারক
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪৪ পিএম
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৪৭ পিএম
নিজের এসব শিল্পকর্ম বিক্রির জন্য ফেসবুকে পোস্ট করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী
‘আজ সকল লজ্জা, ইতস্ততা ভেঙে আপনাদের কাছে হাত পেতে বলছিÑ আমার আম্মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। সারা জীবন মানুষের উপকার করে আজ নিজের উপকারের জন্য আপনাদের কাছে হাত পেতে অনুরোধ করছি। আমার আম্মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।’ এমন আবেগভরা আর্তি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তারিফ হাসান মেহেদী।
গত ১৩ এপ্রিল নিজের ফেসবুকে এক হৃদয়স্পর্শী পোস্টে মায়ের জীবন বাঁচাতে
নিজের আঁকা শিল্পকর্ম বিক্রির ঘোষণা দেন তিনি। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ২০১৪ সাল থেকে
তার মা জাহানারা বেগম (৫৫) অসুস্থ। ২০২২ সালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি কথা বলা ও
চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। এরপর থেকেই শয্যাশায়ী। গত সপ্তাহে তিনি আবারও হৃদরোগে
আক্রান্ত হলে তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে তারিফ আরও লিখেছেন, ‘কী ভাগ্য আমার! গত বছরের ১৪
জুলাই বাবা ও ৬ নভেম্বর বড় ভাইকে হারিয়েছি। ক্যানসার আক্রান্ত বাবার চিকিৎসা করাতে
গিয়ে এখনও ৩৮ হাজার টাকার মতো ঋণে জর্জরিত, যা পরিবারের কাউকে বলিনি তাদের চিন্তা হবে
তাই। আম্মা ২০১৪ সাল থেকে অসুস্থ। এর মধ্যে ২০২২ সালে ব্রেইন স্ট্রোক করে কথা বলা,
চলাফেরার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিছানায় শায়িত একটা মানুষকে প্রতিনিয়ত দেখাশোনা, চিকিৎসা
ব্যয় নির্বাহÑ এসব করতে করতে আজ আমরা অসহায়। গতকাল আম্মা আবার হার্ট স্ট্রোক করেছেন।
জানি না আল্লাহ একটা মানুষকে এভাবে কেন কষ্ট দিচ্ছেন। এখন দ্রুত উন্নত চিকিৎসা করানো
দরকার, যার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। ২০১৬ থেকে আম্মার মেডিসিনসহ অন্যান্য মেডিকেল
টেস্ট বাবদ ঋণ লাখ টাকার ওপরে।’
নিজের শিল্পকর্ম বিক্রির ঘোষণা দিয়ে তারিফ বলেছেন, ‘আমার আম্মাকে
বাঁচাতে আপনারা এগিয়ে আসুন। ডাক্তার বলছেন, ৪৩ শতাংশ হার্ট ব্লক হয়ে গেছে। আপনারা আমার
এই শিল্পকর্মগুলো কিনে আমার পাশে থাকুন, আমাকে সহযোগিতা করুন। নির্ধারিত দামের চেয়ে
বেশি দামে কিনতে চাইলেও কিনুন।’
তারিফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নেত্রকোণা জেলা সদরের ইসলামপুর গ্রামে
তাদের বাড়ি। বাবা ছিলেন বকুল মিয়া মাছ ব্যবসায়ী। গত বছর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষা করে
জানা যায় তার বাবার শরীরে বাসা বেঁধেছে মরণব্যাধি ক্যানসার। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা করাতে
তখনই তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর কয়েক মাস পর পরিবারের ভরসা বড় ভাই শাহিন মিয়া হঠাৎ
হৃদরোগে মারা যান। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তারিফ ষষ্ঠ। বাবার দেখভাল ও চিকিৎসা চালাতে
গিয়ে মাস্টার্স পরীক্ষাও দিতে পারেননি তারিফ।
আর মা তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। এই অসুস্থতার মধ্যেই গত শনিবার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। এখন ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। এ মুহূর্তে মায়ের চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো টাকা-পয়সা তাদের নেই। এ কারণে নিজের কাছে থাকা শিল্পকর্ম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারিফ।
তিনি আরও জানান, শিল্পকর্ম তার কাছে সন্তানের মতো। নিজের মায়ের চিকিৎসায়
এগুলো বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারিফ তার ফেসবুক পোস্টের ঘোষণার মন্তব্যের ঘরে
লিখেছেন, ‘আমি আসলে কারো কাছে সেভাবে অনুদান চাইতে ইচ্ছুক ছিলাম না। শিল্পকর্মগুলোর
প্রতি আশাবাদী আছি। তা-ও অনেকেই বিকাশ/নগদ নাম্বার চাচ্ছেন। ক্যাপশনে আমার বিকাশ/নগদ
নাম্বার দেয়া আছে।’
সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকেই শিল্পকর্ম কিনে নিয়েছেন।
১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তারিফ তার মায়ের রিপোর্ট পাওয়ার পর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিটিস্ক্যান
রিপোর্ট বলছে, আবারও ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন আম্মা। প্লিজ! অবিক্রীত শিল্পকর্মগুলো কিনুন।’
কেরোসিন কাঠ দিয়ে করা তারিফের এ শিল্পকর্মগুলো আপনার সামর্থ্য থাকলে নির্ধারিত দামের
চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে একজন মাকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারেন।
তারিফ তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন, ‘অনেকেই বলছেন, শিল্পকর্ম
কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু পাশে থাকতে চাচ্ছেন। অনেকেই কল ইনবক্স করে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট
যুক্ত করতে বলেছেন। আমি সেটা যুক্ত করলাম। প্রয়োজনে : নগদ/বিকাশ- ০১৭৬৫৮৯ ২৩৫৫, রকেট-
০১৭২৬৩৫৯২৩০-৪; সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৫৪১২২০১০৩০৪১১, ইসলামী ব্যাংক- ২০৫০৩০১০২০১৭৩৫৮১৬,
ডাচ্-বাংলা- ৭০১৭৩৪১০০৫০৮২।’
যোগাযোগ : 801765-892355