× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বর্ষবিদায় ও বরণে আজ মেতে উঠছে পার্বত্য জনপদ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩০ এএম

আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:৩১ এএম

পাহাড়ে নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তির সাতরঙা উৎসব। প্রবা ফটো

পাহাড়ে নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তির সাতরঙা উৎসব। প্রবা ফটো

বৈসাবি উৎসবের রঙ লেগেছে পার্বত্য জনপদে। বর্ণিল সাজে সাজানো হচ্ছে পাহাড়। ঘরে ঘরে আনন্দ আয়োজনের প্রস্তুতি। বসছে আনন্দ-উল্লাস আর নাচ-গানের আসর। পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পার্বত্য চট্টগ্রাম। 

পার্বত্য তিন জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বসবাসরত ১০ ভাষাভাষির ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রতিবছরের মতো এবারও বৈসাবি উৎসবে মাতছে। পাহাড়ি জনপদে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে বর্ষবরণ আর বিদায়ের তিন দিনব্যাপী আয়োজন। রাজধানী ঢাকায়ও বর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে আজ বের হবে শোভাযাত্রা।

তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলার মধ্য দিয়ে জেলায় জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আজ শনিবার শুরু হচ্ছে বৈসাবি উৎসব। আর বিজু সম্প্রদায় পালন করবে ফুল বিজু। উৎসবে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা তরুণ-তরুণীদের রঙ-বেরঙের সাজ আনন্দ বাড়িয়ে দেবে কয়েক গুণ।

বৈসাবি নামটি তিনটি জনগোষ্ঠীর উৎসবের আদ্যক্ষর নিয়ে তৈরি হয়েছে। চাকমাদের ‘বিঝু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ ও ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’-এই তিন উৎসব সমন্বয়ে ‘বৈসাবি’। তবে শুধু বৈসাবি পাহাড়ের সব সম্প্রদায়ের নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠানের বহুমাত্রিকতাকে প্রকাশ করে না। 

বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসবকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর লোকজন ভিন্ন ভিন্ন নামে পালন করে। চাকমারা বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিসু হিসেবে পালন করে ‘বৈসাবি’ উৎসবকে। বছরের শেষ দুদিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এই উৎসব পালন করা হয়।

বিঝু চাকমা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান আনন্দ-উৎসব। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নববর্ষের দিন এই উৎসব পালন করা হয়। ১২ এপ্রিল পালন করা হয় ফুলবিঝু।

আজ ভোরের আলো ফোটার আগেই ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে পড়বে ফুল সংগ্রহের জন্য। সংগৃহীত ফুলের এক ভাগ বুদ্ধের পূজায় আর অন্য ভাগ পানিতে ভাসিয়ে দেওয়া হবে। বাকি ফুলগুলো দিয়ে ঘরবাড়ি সাজানো হবে। 

চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ এপ্রিল (আগামীকাল রোববার) পালন করা হবে মূল বিঝু। পরদিন ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পালন করা হবে গোজ্যেপোজ্যে। 

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব বৈসু পালিত হবে চৈত্র মাসের শেষ দুদিন এবং বৈশাখ মাসের প্রথম দিন। ত্রিপুরাদের এই উৎসবের প্রথম দিনকে বলা হয় হারি বৈসু, দ্বিতীয় দিনকে বৈসুমা এবং তৃতীয় বা শেষ দিনটিকে বলা হয় বিসি কতাল। মূলত আগামী দিনের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য উপরওয়ালার কাছে প্রার্থনা করা হয়ে থাকে এই দিনে। 

ত্রিপুরা ও মারমাদের পানি উৎসব একটি জনপ্রিয় আয়োজন। এটি বৈসাবি উৎসবেরই একটি অংশ। এই উৎসবে সবাই সবার দিকে পানি ছুড়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠবে, যেন গত বছরের সব দুঃখ, গ্লানি ও পাপ ধুয়ে যায়। এর আগে হয় জলপূজা। এর মাধ্যমে পরস্পরের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়। 

মারমা সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের প্রিয় মানুষটির দিকে পানি ছিটানোর মাধ্যমে সবার সামনে ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়। ভালোবাসার এমন বর্ণাঢ্য উচ্ছ্বাস ও বর্ণাঢ্য অনুভূতি ‘গান্ধর্ব্য’ কেবল বৈসাবি উৎসবেই শোভা পায়।

বান্দরবানের তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বিষু উৎসব পালন করে থাকে। এদিন সাংগু নদীতে কলাপাতায় ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে গঙ্গাদেবীর পূজা করে থাকেন এই সম্প্রদায়ের মানুষ। বিষু উৎসবে ঘিলা খেলার মাধ্যমে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর বিষু উৎসব শুরু হবে। তারপর ২০ থেকে ৩০ পদের সবজি দিয়ে তাদের তৈরি ঐতিহ্যবাহী পাচন ভোজন সম্পন্ন করবে। 

বান্দরবানের মারমা সম্প্রদায় এবার চার দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসবের আয়োজন করেছে। উৎসবকে ঘিরে দুদিনব্যাপী পানিখেলা, পিঠা তৈরি, বলীখেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন চলবে। সাংগ্রাই উৎসবের মূল আকর্ষণ-মৈত্রী পানিবর্ষণ জলকেলি উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। মারমা তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠবে জলকেলি বা পানি ছিটানো খেলায়। এ ছাড়া দিনব্যাপী চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৌদ্ধ বিহারগুলোতে (ক্যায়াং) অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন। এই সময় হাজার হাজার প্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে পাহাড়ি নারী-পুরুষরা প্রার্থনায় দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করবেন।

অসমের জাতীয় উৎসব হলো বিহু। বিহু সমাজের সবাই এই উৎসব উদযাপন করে থাকে। এর মূল অংশ হলো কৃষিভিত্তিক উৎসব। বি শব্দটির অর্থ প্রার্থনা এবং শু শব্দের অর্থ শান্তি ও সমৃদ্ধি। বিশু শব্দ থেকে বিবর্তনের ধারায় বিহু শব্দের উৎপত্তি। জনশ্রুতি আছে বিহু মূলত আসামের চুটিয়া উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত। এক্ষেত্রে হু শব্দটি তারা দান অর্থে ব্যবহার করে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অসম জাতি চৈত্র সংক্রান্তিতে বিহু উৎসব উদযাপন করে থাকে। 

১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বসবাস খ্যাত বান্দরবানে ম্রো সম্প্রদায় চৈত্র সংক্রান্তিতে চাংক্রান উৎসব পালনের মাধ্যমে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিবছর বর্ষবরণ উপলক্ষে থাকে ম্রো সম্প্রদায়ের পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। এ ছাড়া ম্রোদের তৈরি বিশাল আকারের বাঁশের প্লোং বাঁশি বাদ্যযন্ত্রের আকর্ষণকে বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে।

ম্রো সম্প্রদায়ের লোকজন ঐতিহ্যবাহী চাংক্রান উৎসবের আয়োজন চলবে এবারের ‘বৈসাবি’তে। উৎসবকে ঘিরে ম্রোরা পানিখেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণ, লাঠি দিয়ে সৃজনশীল কায়দায় শক্তি প্রদর্শন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

রাজধানীতে বের হবে শোভাযাত্রা

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীতে বসবাসরত পাহাড়ি তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ, জায়া-জননী মিলেমিশে প্রাণের এই উৎসবে অংশ নেবে। এর অংশ হিসেবে আজ রাজধানীতে বের হবে বৈসাবি শোভাযাত্রা। রাজধানীর বেইলি রোডের পার্বত্য কমপ্লেক্স থেকে রমনা পার্কের লেকে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পাহাড়ি-বাঙালিরা এবারও মেতে উঠবে ‘বৈসাবি’ উৎসবে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা