প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৬:০১ পিএম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ১৭:২৪ পিএম
নিজ চিত্রকর্মের সামনে হাসুরা আক্তার রুমকি
চিত্রশিল্পী হাসুরা আকতার রুমকির একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ‘ওডে টু পিস অ্যান্ড লাভ: আ ক্যানভাস অব হোপ’ শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে গান্ধী মেমোরিয়াল সেন্টারের গ্যালারিতে শনিবার (৮ জুন) স্থানীয় সময় ২টায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।
উদ্বোধনকালে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরানের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তাঁর বদলে বাংলাদেশ দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার ফজলে রাব্বি এবং এক্সেকিউটিউভ সেক্রেটারি প্রিয়ন্তী কানাকারাত্না উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ভয়েস অব বাংলার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া। উদ্বোধনী ভাষণ দেন গান্ধী মেমোরিয়াল সেন্টারের পরিচালক স্মৃতি করুণা বেগান।
প্রদর্শনীতে মোট ২১টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে। সবগুলো চিত্রকর্মে তিনি সয়েল বেজড রং ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। এরমধ্যে চারটি চিত্রকর্মে অ্যাক্রিলিক পেইন্টের ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাকি ১৭টিতে তিনি মিক্সড মিডিয়ার ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি চিত্রকর্মে তিনি শান্তি ও সৌহার্দ্যের বার্তা পৌছে দিতে চেয়েছেন।
মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তার ‘আইকন্স অব পিস’ সিরিজ
বিশেষত মাটিরঙের ব্যবহারে আঁকা বিসিচিং ফর পিস, ফ্রেন্ডস বন্ড, লাভারস
এমব্রেস, এ মাদারস টাচ বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। মনোযোগ আকর্ষণ করেছে তার ‘আইকন্স অব
পিস’ সিরিজ। এই
সিরিজের প্রথম ছবিতে অহিংস আন্দোলনের প্রবর্তক মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে এঁকেছেন ‘আইকন অব ফ্রিডম’ যেখানে মহাত্না
গান্ধীকে প্রণয়ামরত দেখা যাচ্ছে। এই ছবির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা
স্থাপনের বার্তা দেয়া হয়েছে। ভারতবর্ষে শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্য অগ্রদূত রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুরকে নিয়ে এঁকেছেন দুটো ছবি। দুটোরই শিরোনাম ‘দ্য গ্রেট
বার্ড’। মাদার তেরেসাকে
নিয়ে এঁকেছেন ‘দ্য মেসেঞ্জার অব পিস ফর হিউম্যানিটি’। এছাড়া ‘উইজডমস রিফ্লেকশন:
বুদ্ধাস সেরেনিটি’ চিত্রকর্মে দেখা যাচ্ছে বুদ্ধের ধ্যানরত
সৌম্য অবয়ব। বাকি ছবিতে উপাদান হিসেবে রেখেছেন শান্তির প্রতীক পায়রা এবং খাটি নীল।
খাঁটি নীল রঙকে শান্তি ও স্থিতিশীলতার রঙ বলে মানা হয়।
প্রদর্শনীর চিত্রকর্মের বিষয়ে হাসুরা
আক্তার রুমকি জানান, ‘এই প্রদর্শনীতে আমি আমার সত্বার রঙ
ক্যানভাসে ফুঁটিয়ে তুলতে চেয়েছি। শুধু তীব্র আকাঙ্খা থেকেই আমি ছবি আঁকি না। বরং আমার
এই অস্তিত্ব আর স্বপ্ন থেকে বাস্তবের মধ্যবর্তী সংযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করি।
সয়েল বেজড রঙ নিয়ে কাজ করাটা শুধু আমার ইচ্ছের বিষয় নয়। এ ধরনের রঙ দিয়ে আমি প্রকৃতি
আর জীবনচক্রের যোগাযোগ দেখাতে চেয়েছি। ধুলোর মতোই আমরা ক্ষণস্থায়ী। এই ক্ষণস্থায়ী সময়ে
আমরা যন্ত্রণা ও গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে চাই তবুও’।
নিজের চিত্রকর্মের ব্যাখ্যার পাশাপাশি
তিনি এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানান, ‘এই প্রদর্শনীর
মাধ্যমে আমি গোটা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংঘাত-সহিংসতা বন্ধের আর্তি জানিয়েছি। বিশেষত
গাজা উপত্যকায় অমানবিক নির্যাতন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই। প্রদর্শনীর প্রতিটি ছবির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করে
শান্তি ও সম্প্রীতি স্থাপনের তাগাদা দিয়েছি। বিশেষত আমার হ্যান্ডস অব কানেকশন একটি
সিরিজ। এই সিরিজে আমি মূলত হাতের ছবি এঁকে মানুষের সম্পর্কের বিভিন্ন রূপ দিতে চেয়েছি।
প্রতিটি ছবিই আলাদা। প্রতিটি ছবিতেই বিভিন্ন আঙ্গিকে ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও আস্থার
গল্প ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি। ‘আইকন্স অব পিস’ সিরিজে আমি
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির ছবি এঁকেছি যারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছেন।
কিছু ছবি ভালোবাসা এবং সৌন্দর্য্যের শক্তিকে উদযাপন করেছে। বিশেষত ‘হোয়াট আ ওয়ান্ডারফুল
ওয়ার্ল্ড’-এ যে বার্তা
দিতে চেয়েছি তা যেন আমাদের সবার মনে আলোকপাত করে, এই রইলো প্রত্যাশা’।
গান্ধী মেমোরিয়াল সেন্টারের পরিচালক
স্মৃতি করুণা বেগান বলেন, ‘গুণী শিল্পী হাসুরা আক্তার রুমকির একক
প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে আমরা উচ্ছ্বসিত। গান্ধী সেন্টারে তার এই প্রদর্শনীর ছবিগুলোর
বিষয়াদি বিমূর্ত। অথচ এই গুণী শিল্পী প্রতিটি ছবিতে মানবিক স্পর্শ জুড়ে দিয়েছেন। প্রতিটি
ছবি সার্বজনীন বার্তা পৌছে দিতে চায় যা প্রত্যেকের হৃদয় ছুয়ে গেছে। ভবিষ্যতে তার আরও
প্রদর্শনী আয়োজনের প্রত্যাশা করছি’।
‘ওডে টু পিস
অ্যান্ড লাভ: আ ক্যানভাস অব হোপ’ প্রদর্শনীটি চলবে সোমবার (১০ জুন)
পর্যন্ত। প্রদর্শনীটি সর্বসাধারনের জন্য উন্মুক্ত।
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ওরিয়েন্টাল আর্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও
স্নাতকোত্তর করেছেন হাসুরা আক্তার রুমকি। ২০২১ সালে জাপানের কাহাল আর্ট গ্যালারিতে
হওয়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন
তিনি। এছাড়া কয়েকটি গ্রুপ আর্ট প্রদর্শনী, কর্মশালা, আর্টক্যাম্প, প্রকল্প ও আর্ট রেসিডেন্সিতে অংশগ্রহণ করেছেন এই শিল্পী। রুমকির ছবিতে দ্বন্দ্ব, আবেগ, মানবিক সংযোগের আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট
ফুটে ওঠে।