তাসকিন জাহান
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৭ পিএম
বরকত অর্থ কল্যাণ ও প্রাচুর্য। কোনো জিনিসে বরকত হওয়ার অর্থ ওই জিনিসের কল্যাণময়তায়
প্রাচুর্যসাধন ও স্থায়িত্ব লাভ। অর্থাৎ কোনো জিনিসের ইতিবাচক দিকের গুণগত মান বৃদ্ধি
পাওয়াই ওই জিনিসের বরকত। যেমন টাকাপয়সার বরকত হওয়ার অর্থ টাকাপয়সা কল্যাণের পথে ব্যবহৃত
হওয়া। টাকাপয়সায় বরকত হওয়ার অর্থ পরিমাণে টাকাপয়সা বেড়ে যাওয়া নয়। তবে কখনও সেভাবে
বরকত সাধিত হতে পারে।
খাদ্যখাবারে বরকত হওয়ার অর্থ খাদ্যখাবার দ্বারা সুস্থ থাকা। বয়সে বরকত হওয়ার
অর্থ কল্যাণময় কাজে জীবনের সময়গুলো ব্যয় হওয়া, অল্প সময়ে অনেক ভালো কাজ করতে পারা।
এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র এবং কাজের মধ্যে বরকত সাধিত হতে পারে, বরকতময় জীবন গড়ে
উঠতে পারে যদি আমরা বরকতময় জীবন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কুরআন-হাদিস নির্দেশিত পন্থাসমূহ
অবলম্বন করি।
ইসলামি চিন্তাবিদদের মতে, জীবনের সময়ে বরকত অর্জিত হয় নেক আমল দ্বারা। যে যত
বেশি নেক আমল করবে, তার জীবনে তত বেশি বরকত হবে। হজরত সাওবান (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে
এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নেক কাজ ছাড়া অন্য কিছু বয়স বাড়াতে পারে
না। দোয়া ছাড়া অন্য কিছু ভাগ্য ফেরাতে পারে না, আর মানুষ তার কৃতপাপের কারণে রিজিক
থেকে বঞ্চিত হয়।’ Ñসুনানে ইবনে মাজাহ : ৯০
মুস্তাদরাকে হাকিমের এক বর্ণনায় আছে, যারা পিতা-মাতার খেদমত করে তাদের বয়সে আল্লাহ
বরকত দান করেন। সম্পদে বরকত অর্জিত হয় দানসদকা দ্বারা। আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সম্পদ
ব্যয় করলে সম্পদ কমে না, বরং বাড়ে। এর বিপরীতে অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করলে সে সম্পদে
আল্লাহ বরকত দেন না। কুরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘সুদ আল্লাহ মোচন করে দেন আর দানসদকা
বৃদ্ধি করে দেন।’ Ñসুরা বাকারা : ২৭৬
হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বর্ণনা করেছেন, ‘সদকা সম্পদ হ্রাস করে না। ক্ষমা
করার দ্বারা আল্লাহ বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় অবলম্বন
করলে আল্লাহ তার মর্যাদা উঁচু করে দেন।’ Ñসহিহ মুসলিম : ১৫৮৮
তদ্রূপ ব্যবসাবাণিজ্যে বরকত হয় সততার দ্বারা। একজন ব্যবসায়ী মিথ্যা বলে অচল মাল
চালিয়ে দিলে সাময়িক লাভ করতে সক্ষম হলেও পরে ক্রেতা সঠিক তথ্য অবগত হওয়ার পর ওই ব্যবসায়ীকে
বর্জন করে। ফলে ওই ব্যবসায়ী উক্ত ক্রেতা থেকে ভবিষ্যতে আরও বহু দিন যেসব লাভ অর্জন
করতে সক্ষম হতো তা থেকে বঞ্চিত হয়। এভাবে সততা বর্জনের কারণে সে বঞ্চিত হয়। এটাই হলো
তার বরকত মোচন।
খাদ্যখাবারে বরকত অর্জন করার জন্য আল্লাহর নাম নিয়ে ও আল্লাহ কর্তৃক বরকত দানের
বিষয়ে দোয়া করে খাবার শুরুর শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। খাবার সামনে এলেও এমন দোয়া রয়েছে।
খাবার শুরুর সময়ও এমন দোয়া রয়েছে। হাদিসে বলা হয়েছে, খাদ্যখাবারে আরও বরকত হয় একত্রে
খাওয়ার দ্বারা এবং পড়ে যাওয়া খাদ্যের টুকরা উঠিয়ে (প্রয়োজনে ধুয়ে) খেলে। রিজিকে বরকত
হয় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারা। আর রিজিক দ্বারা শুধু খাদ্যখাবার
উদ্দেশ্য নয়, বরং মানুষ জীবনে খাদ্যখাবার, ধনসম্পদ, পোশাক-পরিচ্ছদ, জ্ঞান-বুদ্ধি, শান্তি-নিরাপত্তা
যা কিছুই ভোগ করে সবই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত।