তারিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৫ পিএম
৫৬৩ বছরের পুরোনো
চেহেলগাজী মসজিদ। ধারণা করা হয়, সুলতান রুকনুদ্দিন বারবক শাহের রাজত্বকালে (১৪৬০-১৪৭৪
সাল) তার উজির ইকরার খানের নির্দেশে তৎকালীন পূর্ণিয়া জেলার অন্তর্গত জোর ও বারুর পরগনার
শাসনকর্তা উলুঘ নুসরত খান মসজিদটি নির্মাণ করেন। জেলায় এটিই প্রথম মসজিদ। মসজিদের পুবপাশে
রয়েছে চেহেলগাজীর মাজার। দিনাজপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ওয়েস্টমেকট ১৮৭৪ সালে চেহেলগাজী
মসজিদ থেকে তিনটি শিলালিপি উদ্ধার করেন। এ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৬০ সালে চেহেলগাজী
মসজিদটি নির্মাণ করার সময় মাজারটি সংস্কার করা হয়। অর্থাৎ মসজিদের আগেই মাজারটির অস্তিত্ব
ছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, ৪০ জন গাজীকে একত্রে এখানে সমাহিত করা হয়। এজন্য
এ স্থানের নাম হয় চেহেল (চেহেল ফারসি শব্দ, বাংলায় এ শব্দের অর্থ চল্লিশ), গাজী (ধর্মযোদ্ধা)।
মসজিদের অবস্থান
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তরে। মসজিদের কালনির্দেশক তিনটি শিলালিপি
থেকে জানা যায়, ৮৬৫ হিজরির ১৬ সফর (১৪৬০ সালের ১ ডিসেম্বর) মসজিদটি নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে মসজিদটির দেয়াল ছাড়া আর কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই। দেয়ালগুলোও ভগ্নপ্রায়। দেয়ালে
কোনো অলংকরণ দেখা যায় না। তবে মেহরাবের কাছে কিছু পোড়ামাটির ফলক এখনও বর্তমান। যার
বেশিরভাগই খুলে পড়ছে। বর্গাকার মসজিদটির মূল কক্ষের ওপর একটি এবং পুবদিকের বারান্দার
ওপর সম্ভবত তিনটি গম্বুজ ছিল। বাইরের দিকে মসজিদের মূল কক্ষের আয়তন ৪ দশমিক ৯০ মিটার।
মূল কক্ষের পুবদিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে দুটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ আছে।
পুবদিকের তিনটি প্রবেশপথের মধ্যে মাঝের খিলানের উচ্চতা ২ দশমিক ৬০ মিটার এবং প্রস্থ
শূন্য দশমিক ৭৭ মিটার। পুবদিকের বারান্দার দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৯০ মিটার এবং প্রস্থ ১ দশমিক
৮৩ মিটার। বারান্দায় প্রবেশের জন্য মূল কক্ষের পুবদিকের অনুরূপ আয়তনবিশিষ্ট তিনটি খিলানযুক্ত
প্রবেশপথ রয়েছে। মসজিদের ভেতরে পশ্চিমদিকে রয়েছে তিনটি মেহরাব। মাঝের মেহরাবটি পাশের
দুটির তুলনায় একটু বড়। মেহরাবগুলো বহুপত্র খিলানবিশিষ্ট। মেহরাবের অলংকরণে পাথর দেখা
যায়। পাথর ও পোড়ামাটির ফলক দিয়ে এ মেহরাবগুলো সুন্দরভাবে অলংকৃত। পোড়ামাটির ফলকগুলোর
মধ্যে ফুল, লতাপাতা ও ঝুলন্ত মোটিফ লক্ষণীয়। এখনও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পুরোনো এ মসজিদে
নামাজ আদায় করে। বর্তমানে ৩০-৪০ জনের নামাজ পড়ার মতো জায়গা আছে। সংস্কার বা সংরক্ষণের
কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মসজিদটি হারিয়ে যেতে বসেছে। মসজিদের অলংকৃত মেহরাব অরক্ষিত,
অনেকাংশ ভেঙে গেছে। কালের সাক্ষী মসজিদটি সংরক্ষণের দাবি এলাকাবাসীর।