শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৮ পিএম
রমজান মাসকে বলা হয় কৃচ্ছ্রসাধনের
মাস। ফলে রমজান মাস সামান্য কষ্ট ও শ্রমসাধ্য হবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের
সমাজে কিছু মানুষ আছেন, যারা সম্পদের প্রাচুর্যতা দেখানোর জন্য রমজান মাসে কৃচ্ছ্রসাধনের
পরিবর্তে বাড়িতে উৎসবের আমেজ তৈরি করেন। অতিরিক্ত ও বেশি বেশি খাবারের ব্যবস্থা
করেন। তাদের চাহিদামতো বিশাল ও মুখরোচক খাবারের আয়োজন করতে যেয়ে বাড়ির লোকেরা
ইবাদত-বন্দেগির জন্য সুযোগ পান কম। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভালো খাবার খেতে ইসলাম
নিষেধ করেনি। তবে সীমাতিরিক্ত সবকিছু থেকে বিরত থাকতে বলেছে।
কুরআন-হাদিসের আলোকে বোঝা
যায়, রোজার বহুমুখী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য রয়েছে। তবে প্রধান লক্ষ্য, খোদাভীতি অর্জন
করা। খোদাভীতি একটি সামগ্রিক বিষয়। সার্বিকভাবে একজন মানুষের মনে যখন আল্লাহভীতি
স্থান করে নেবে, তখন ওই ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হবেন। প্রতিটি কাজের
আগে আল্লাহর নির্দেশনার বিষয়টি চিন্তা করবেন, কিসে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর কিসে হন
অসন্তুষ্ট-এসব চিন্তাভাবনা করে তিনি জীবন পরিচালনা করেন। এখন প্রশ্ন হলো, একজন
প্রকৃত রোজাদারের জন্য এসবের বাইরে আর কী নিয়ে ব্যস্ততা থাকতে পারে? একজন
রোজাদারের জন্য ইফতার-সেহরিতে খাবারের অধিক্য নিয়ে মেতে থাকা কি শোভন? অথচ তার
পাশের বাড়ির কেউ না কেউ না খেয়ে রোজা রাখছে। এমন রোজাদারের ওপর কি আল্লাহ সন্তুষ্ট
হবেন?
এমন শিক্ষা নিয়ে রমজান
আসেনি। রমজান এসেছে মিতাচার শেখাতে, রমজান এসেছে ধনী-গরিবের ব্যবধান ঘোচানোর
শিক্ষা নিয়ে, গরিবের কষ্ট উপলব্ধি করার এবং তাদের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
পালনের শিক্ষা নিয়ে। মিতাচার সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা অপব্যয় করে,
সীমাতিরিক্ত খরচ করে নিঃসন্দেহে তারা শয়তানের ভাই। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই তোমরা
খরচের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করবে না।’ কেউ কেউ বলেন, রমজান মাসে যত ইচ্ছা খেতে
পারো, কোনো হিসাব দিতে হবে না। এ কথা ভুল। রমজানেও খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সংযত হতে
হবে। সব ব্যাপারে মধ্যমপন্থা অবলম্বনের ব্যাপারে ইসলামে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ইসলামে সামর্থ্য অনুযায়ী
ব্যয় করতে বলে। বেশিও না, কমও না। মাঝামাঝি পর্যায়ে ব্যয় করাই প্রকৃত মুমিনের
জীবন। রমজান আমাদের তা-ই শিক্ষা দেয়।