জহির উদ্দিন বাবর
প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৪ ১৫:২৫ পিএম
মানুষমাত্রই গুনাহগার।
তবে মানুষ যত পাপই করুক একদিন না একদিন তাকে সঠিক পথে ফিরে আসতেই হবে। পাপমুক্ত জীবনের
পথ তাকে ধরতেই হবে। মানুষের পরম কাঙ্ক্ষিত পাপমুক্ত জীবন গঠনের জন্য মাহে রমজানের বিকল্প
নেই। কারণ বছরের যেকোনো সময়ের চেয়ে এ মাসে নিজেকে পাপমুক্ত রাখা সহজ। পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা
সে সুযোগ করে দেয়। আমরা পরিবেশের কারণে না চাইলেও পাপে জড়িয়ে পড়ি। রমজানে পাপমুক্ত
জীবন গড়ার পরিবেশ বিরাজ করে।
রমজানে বান্দা
যখন বিগত দিনের কৃত পাপ থেকে তওবা করে তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বান্দার বিনীত
প্রার্থনা ছাড়া আল্লাহ সাধারণত ক্ষমা করেন না। এজন্য রমজানে চাই বেশি বেশি তওবা এবং
আল্লাহর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সোপর্দ। তওবা কবুল হওয়ার জন্য সাধারণত তিনটি শর্তÑঅন্যায়
পরিত্যাগ করতে হবে, পাপের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং পুনরায় সেই কাজ না করার অঙ্গীকার
করতে হবে। তবে কারও হক নষ্ট হয়ে থাকলে প্রথমে সেই ব্যক্তির সঙ্গে বিষয়টি সুরাহা করার
পর এ তিনটি শর্ত পালন করতে হবে। বান্দার হক আদায় না করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেও
তা কবুল করা হবে না।
নিজের অন্যায়কে
স্মরণ করে মানুষ যখন অনুতপ্ত হয় এবং মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তখন তিনি ক্ষমা না
করে পারেন না। তওবাকারী বান্দার প্রতি আল্লাহ সবচেয়ে খুশি। মানুষ যতবারই অন্যায় করুক,
পাপে লিপ্ত হোক আল্লাহ তার অসীম দয়া ও করুণায় প্রতিবারই বান্দাকে মাফ করতে প্রস্তুত।
তবে বান্দাকে চাইতে হবে, তওবা করতে হবে। রমজান হলো তওবা কবুলের মাস। রমজানের প্রতি
মুহূর্তে আল্লাহ অগণিত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। অন্য মাসগুলোর তুলনায় রমজানে আরও সহজে
বান্দার তওবা কবুল হয়। এ মাসে যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে তাকে ক্ষমা করা হবে বলে আল্লাহর
নবী (সা.) ঘোষণা করেছেন।
এজন্য রমজানে
প্রত্যেককে নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও পাপমুক্ত করার সংকল্প করতে হবে। তওবা ও ইস্তেগফারের
প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো মানুষের ক্ষতি করে থাকলে, কারও জীবন, সম্পদ বা সম্মানে
আঘাত করে থাকলে প্রথমে তার কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। কোনো অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকলে
এখনই তা পরিত্যাগ করতে হবে। কারও সম্পদ অন্যায়ভাবে দখল করে রাখলে অবিলম্বে ফেরত দিতে
হবে। এরপর নিজের মধ্যে অনুশোচনাবোধ সৃষ্টি হলে আল্লাহতায়ালা বিগত দিনের গুনাহ অবশ্যই
ক্ষমা করবেন। অতীতে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হয়ে থাকলে আবার তওবা করতে হবে। তওবা ভঙ্গ হয়ে গেলেও
আবার তওবা করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন। বান্দার বারবার গুনাহ এবং তওবার দ্বারা আল্লাহ
বিরক্ত হন না। আল্লাহ চান বান্দা যত অবাধ্যই হোক একসময় তাঁর দরবারে ফিরে আসুক।
রমজান মূলত মুমিনের
পাপমুক্ত হওয়ার একটি বড় উপলক্ষ। এ মাসে বান্দাকে পাপমুক্ত করার অবারিত সুযোগ আল্লাহ
দিয়ে রেখেছেন। এ সুযোগ পাওয়ার পরও কেউ তা কাজে না লাগালে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আল্লাহর
রাসুল (সা.) এমন ব্যক্তির জন্যই আক্ষেপ করেছেন। বলেছেন, রমজান পেয়েও যারা জীবনের গুনাহ
ক্ষমা করাতে পারল না তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। দুর্ভাগা হওয়া কারও জীবনের কাম্য
হতে পারে না। এজন্য আসুন পাপমুক্ত জীবন গড়ার অঙ্গীকার করি এ রমজানে। আর আল্লাহ যেন
সে তৌফিক দেন সেই দোয়াও করি।