শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪ ০২:৪৮ এএম
দুনিয়ায় মানুষ
যখন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, কোনো বিপদে আক্রান্ত কিংবা অসুস্থ হয় তখন সে বিচলিত
হয়ে পড়ে। নানা ধরনের দুর্বলতা ও সংকীর্ণতা তাকে পেয়ে বসে। তখন সে মহান আল্লাহর কাছে
আশ্রয় কামনা করে রহমতলাভের আশায়, যে সমস্যার সম্মুখীন তা দূর হওয়ার কামনায়। এর মাধ্যমে
সে আল্লাহর সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার চিন্তিত বিষয়টি
তাকে বিনিদ্র রাখে। কিন্তু যখন তার কষ্ট দূর হয়ে যায়, তখন শয়তান তাকে ভুলিয়ে দেয়। আগে
যে অবস্থা ছিল, সেখানে চলে যায়। এভাবে আস্তে আস্তে আল্লাহর সঙ্গে তার সম্পর্ক দূর হয়ে
যায়। আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের কারণ (ইবাদত-বন্দেগি) ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। পুনরায় সে
গাফিলতিতে নিমজ্জিত হয়। এমনকি সে আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয়ে যায়।
এগুলো অধিকাংশ
মানুষেরই অভ্যাস। বরং অনেক আল্লাহ-বিশ্বাসী মানুষও এমন শিথিলতার শিকার হয়। তারা বিপদ-মুসিবতের
সময় খুব আল্লাহ-আল্লাহ করে, মান্নত করে, দোয়া করে, তওবা-ইস্তেগফার করে। কিন্তু যখন
আল্লাহ বিপদের কঠিন সময় পার করে দেন, অসুস্থতা থেকে সুস্থতা দান করেন, চিন্তামুক্ত
করেন তখন আল্লাহর দরবারে দোয়া করা থেকে উদাসীন হয়ে যায়। ফলে তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা
জ্ঞাপন করার তৌফিক তাদের ভাগ্যে জোটে না; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কুরআন মাজিদের
একাধিক জায়গায় আল্লাহ রব্বুল আলামিন মানুষের এমন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার অবস্থা
বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষকে যখন দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে
বা দাঁড়িয়ে আমাকে ডেকে থাকে। তারপর আমি যখন তার দুঃখ-দৈন্য দূর করি, সে এমন পথ অবলম্বন
করে যেন তাকে যে দুঃখ-দৈন্য স্পর্শ করেছিল তার জন্য সে আমাকে ডাকেইনি। যারা সীমা লঙ্ঘন
করে তাদের কাজ তাদের কাছে এভাবেই শোভনীয় করে দেওয়া হয়েছে।’ Ñসুরা ইউনুস : ১২
বর্ণিত আয়াতে
আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা এসেছে ওই মানুষের জন্য, যে বিপদে বা কষ্টের ভেতরে নিপতিত
হয় এবং সর্বদা সে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে; যেন আল্লাহ তাকে এ বিপদ থেকে মুক্ত
করেন। আর যখন আল্লাহ তার এ বিপদ দূর করে দেন, যে বিপদ তাকে ঘিরে ছিল, সে সবকিছু ভুলে
যায় এবং পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যায়। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আর যদি আমি মানুষকে
আমার পক্ষ থেকে রহমত আস্বাদন করাই, এরপর তার থেকে তা কেড়ে নিই, তাহলে সে নিশ্চয় নিরাশ
ও অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়বে। আর দুঃখদুর্দশা স্পর্শ করার পর যদি আমি তাকে নেয়ামত আস্বাদন করাই,
তাহলে সে অবশ্যই বলবে, আমার থেকে বিপদাপদ দূর হয়ে গেছে, আর সে হবে অতি উৎফুল্ল ও অহংকারী।’
Ñসুরা হুদ : ৯
মহান আল্লাহ ওইসব
লোকের থেকে তার নেককার ধৈর্যশীল নিয়মিত আনুগত্যকারী গুনাহ বর্জনকারী লোকদের আলাদা করেছেন
এবং তাদের ক্ষমা ও পুণ্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে যারা সবর করেছে
এবং সৎকর্ম করেছে তাদের জন্যই রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান।’ Ñসুরা হুদ : ১১
এ কারণেই ইমানদার ব্যক্তির কর্তব্য সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করা, সুখে-দুঃখে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং কাজে-কর্মে ইসলামি আকিদার ওপর সুদৃঢ় থাকা। নেয়ামতের শুকরিয়া করা। আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দূরে থাকা যেগুলো আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজিদে বর্ণনা করেছেন এবং হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাদিসে সুস্পষ্ট করেছেন।