তাসকিন জাহান
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০২৪ ১৫:০৮ পিএম
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২৪ ১১:৪০ এএম
বুদ্ধিমান মুমিন
বান্দা সর্বদা কল্যাণের প্রতি ধাবিত হয়। যেসব কাজে দয়াময় আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, সেসব
কাজে আগ্রহী হয়। আর যেসব কাজ তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তা এড়িয়ে চলে। বিরত থাকে ওই
সব কাজ থেকেও, যা তার দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতির কারণ হয়। যে জিনিসের নৈকট্য উপকারী,
তার কাছাকাছি থাকতে হবে। আর যে জিনিসের নৈকট্য ক্ষতিকর, তা থেকে দূরত্বে অবস্থান করতে
হবে। এটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ও ইমানের দাবি।
বান্দার জন্য
আল্লাহর নৈকট্য সবচেয়ে উপকারী। যারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে অগ্রসর হয়, আল্লাহ তাদের
প্রশংসা করে ইরশাদ করেন, ‘তারা আপন রব পর্যন্ত পৌঁছার উপায় তালাশ করে। এ উদ্দেশ্যে
যে, কে তার সবচেয়ে নিকটবর্তী হতে পারে। তারা তাঁর রহমতের আশা রাখে ও তাঁর আজাবের ভয়
করে।’ Ñসুরা বনি ইসরাইল : ৫৭
বস্তুত আল্লাহর
নৈকট্যই বান্দার প্রকৃত শক্তির উৎস। তাই যেসব আমল ও ইবাদত বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী
করে, সেগুলো জানতে হবে; সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। শরিয়তে এমন বিশেষ কিছু ইবাদত রয়েছে,
যা আল্লাহর নিকটবর্তী করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর ও ফলপ্রসূ। সেগুলোর অন্যতম তওবা।
তওবা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে। আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে দূরে রাখে। হজরত রাসুলুল্লাহ
(সা.) এমনটিই বলেছেন। বলা হয়েছে, বান্দা আল্লাহকে যত বেশি স্মরণ করবে, তত বেশি তাঁর
আপন হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, ‘বান্দা আমার প্রতি যেরূপ ধারণা পোষণ করে, আমি তার
সঙ্গে সেরূপ আচরণ করি। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সঙ্গেই থাকি।’ Ñসহিহ মুসলিম
: ২৬৭৫
ফরজ ইবাদতের মধ্যে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ আদায় করা, আল্লাহর সামনে সেজদাবনত হওয়া। সেজদা বান্দাকে
আল্লাহর অনেক নিকটবর্তী করে। ইরশাদ হচ্ছে, ‘সেজদা করো, নিকটবর্তী হও।’ Ñসুরা আলাক
: ১৯
বর্ণিত আয়াতে
সেজদার কথা বলে মূলত নামাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ বলা হয়েছে,
সেজদা ও নামাজ বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘বান্দা সেজদাবনত
অবস্থায়ই আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। অতএব সেজদায় গিয়ে অধিক পরিমাণে দোয়া করো।’ Ñসহিহ
মুসলিম : ৪৮২
সেজদা চূড়ান্ত
পর্যায়ের বিনীত হওয়ার নিদর্শন। এটি আত্ম-অবদমন ও অহংকার পরিত্যাগের বার্তা দেয়। বান্দা
যখন সেজদা করে, সে নিজ প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে। ফলে সে নিজ প্রতিপালকের নিকটবর্তী
হয়। তার সন্তুষ্টি লাভ করে। যে ব্যক্তি জান্নাতে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী হতে
চায়, রাসুল (সা.) তাকে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সে যেন অধিক পরিমাণে সেজদা করে নিজেকে
এই মর্যাদায় পৌঁছাতে সহযোগিতা করে।’ Ñসহিহ মুসলিম : ৪৮৯
দোয়া একটি ইবাদত।
আল্লাহ দোয়াকারীর অতি কাছাকাছি অবস্থান করেন। বান্দার দোয়া কবুল করেন। তার সহযোগিতা
করেন। ভালো কাজের তৌফিক দেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করে, আপনি বলুন, আমি পাশেই আছি। কেউ যখন আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই।’ Ñসুরা
বাকারা : ১৮৬
উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। জান্নাতে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গী হওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় ও কেয়ামতে আমার সবচেয়ে কাছাকাছি থাকবে, যে চরিত্রের দিক দিয়ে সবচেয়ে সুন্দর।’ Ñজামে তিরমিজি : ২০১৮