ইসলামী স্থাপত্য
আহসানুল কবির
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৫১ পিএম
প্রায় সাড়ে ৩০০
বছরের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজারহাটের চান্দামারী মসজিদ। কুড়িগ্রামের রাজারহাট
উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের চান্দামারী গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় মসজিদটি অবস্থিত। উপজেলা
সদর থেকে ৪ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে এর অবস্থান। মসজিদের নির্মাণকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট
কোনো তথ্য নেই। যা রয়েছে, তার সবই অনুমান নির্ভর। মসজিদ নির্মাণ নিয়ে কোনো শিলালিপিও
নেই। তবে রাজারহাট উপজেলায় চান্দামারী মসজিদটি যে জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী
মসজিদের অন্যতম এ নিয়ে স্থানীয়দের দ্বিধা নেই। মসজিদের নির্মাণ কৌশল এবং স্থাপত্যশৈলী
দেখে এর প্রাচীনত্ব সম্পর্কে ধারণা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও মসজিদটির প্রাচীনত্ব
সম্পর্কে নিশ্চিত নন। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের ভাষায়, আমার বাবা-দাদাও মসজিদটি দেখেছেন।
কিন্তু এর নির্মাণকাল সম্পর্কে তাদেরও কাছে কোনো তথ্য নেই।’ তবে নির্মাণশৈলী ও শিল্পবৈশিষ্ট্য
অনুযায়ী ধারণা করা হয়, মসজিদটির নির্মাণকাল আনুমানিক ১৫৮৪-১৬৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী
সময়ে। এর গায়ের নকশাগুলোতে রয়েছে মুঘল আমলের স্থাপত্য কৌশল ও শৈলীর অনন্য দৃষ্টান্ত।
চান্দামারী মসজিদটি কবরসহ ৫২ শতক জায়গাজুড়ে অবস্থিত। মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট এবং
প্রস্থে ২০ ফুট। প্রায় ৩০০ জনের মতো মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে পারে। এর নির্মাণকাজে
ভিসকাস নামে এক ধরনের আঁঠালো পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের সামনের দিকে রয়েছে
৫ ফুট উঁচু তিনটি বড় দরজা। ওপরে তিনটি বড় গম্বুজ আছে যার ব্যাসার্ধ প্রায় ৫.৫০ ফুট।
গম্বুজগুলোর গায়ে দৃষ্টিনন্দন নকশা করা আছে। চার কোনায় চারটি মাঝারি আকৃতির মিনার
ও চারদিকে ঘিরে আছে আরও ১৬টি ছোট গম্বুজ। ভেতরের দিকে তিনটি মেহরাব আছে। মসজিদের গায়ে
অনেকগুলো খিলান আছে। এ ছাড়া বাতাস চলাচলের জন্য উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে জানালা
আছে। মসজিদটির সামনে আছে একটি বড় আকৃতির পুকুর। গম্বুজ এবং মেহেরাবগুলো বিশিষ্ট ইট,
সুরকির যে সুনিপুণ কারুকার্যে নির্মিত হয়েছে, তেমনটি জেলার অন্য কোথাও দেখা যায় না।
সাদা রঙের এই মসজিদটির কারুকার্যে রয়েছে সুলতানি এবং মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ। কয়েকশ
বছর আগে নির্মিত মসজিদটির সঙ্গে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের যথেষ্ট সাদৃশ্য রয়েছে।
দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি
দেখতে যেমন মানুষ আসেন তেমনি নামাজ আদায় করতেও আসেন। বিশেষত প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজে
দূরদূরান্ত থেকে মুসুল্লিরা মসজিদে আসেন। কালের সাক্ষী মসজিদটিতে পড়েছে সময়ের ছাপ।
মসজিদের কিছু কিছু জায়গা নষ্ট কিংবা ক্ষয়ে গেছে। পুরোনো কারুকাজগুলোও অনেকটা নষ্ট হওয়ার
পথে। দুয়েকটি অংশে গাঁথুনিও ভেঙে গেছে। দেয়ালে কোথাও কোথাও লোনা ধরেছে। পুরো অবকাঠামোটি
এখন ধ্বংসের সম্মুখীন। এলাকাবাসীর দাবি মসজিদ সংরক্ষণে সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
এগিয়ে আসুক। মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক।