শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৩ পিএম
দয়াময় আল্লাহতায়ালা
ক্ষমা করা পছন্দ করেন। তাই পরস্পরের মধ্যে ক্ষমার নীতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
‘অতএব, তোমরা ক্ষমা করো এবং এড়িয়ে চলো যতক্ষণ না আল্লাহর নির্দেশ এসে পড়ে। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সবকিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।’ Ñসুরা বাকারা : ১০৯
অন্য আয়াতে মহান
আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ক্ষমার নীতি গ্রহণ করো। লোকদের সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের এড়িয়ে
চলো।’ Ñসুরা আরাফ : ১৯৯
আয়াতে ‘ক্ষমার
নীতির’ আলোচনায় আরবি ‘আফওয়া’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আফওয়া বলা হয় এমন কাজকে, যা সহজে
কোনোরকম কষ্ট ছাড়া সম্পন্ন করা যায়। তাহলে অর্থ দাঁড়ায়, আপনি এমন বিষয় গ্রহণ করুন,
যা মানুষ অনায়াসে করতে পারে। অর্থাৎ শরিয়তে নির্ধারিত কর্তব্য সম্পাদনে আপনি সাধারণ
মানুষের কাছে সু-উচ্চমান দাবি করবেন না; বরং তারা সহজে যে পরিমাণ আমল করতে পারে আপনি
তা-ই গ্রহণ করে নিন।
মুফাসসিরদের মতে,
আয়াতে মহান আল্লাহ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মানুষের আমল-আখলাকের ব্যাপারে সাধারণ
আনুগত্য কবুল করে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ যা করতে পারে তার প্রকাশ্যরূপ
দেখে সন্তুষ্ট থাকা। তাদের প্রকৃতি যেটা করতে সমর্থ নয় সেটা তাদের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া,
ভুলত্রুটি হলে উপেক্ষা করা; তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ না করা। Ñইবনে কাসির
আয়াতের দ্বিতীয়
নির্দেশ সৎকাজের আদেশ বোঝাতে আরবি ‘উরফি’ শব্দ বলা হয়েছে। এ শব্দের অর্থ সৎকাজ। যেকোনো
ভালো ও প্রশংসনীয় কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। Ñইবনে কাসির
ইসলামি চিন্তাবিদদের
মতে, যেসব লোক আপনার (নবী) সঙ্গে মন্দ ও উৎপীড়নমূলক আচরণ করে, আপনি তাদের থেকে প্রতিশোধ
গ্রহণ করবেন না; বরং ক্ষমা করে দিন। সেই সঙ্গে সৎকাজের উপদেশ দিতে থাকুন। অর্থাৎ অসদাচরণের
বিনিময় সদাচরণ এবং অত্যাচারের বিনিময় শুধু ন্যায়নীতির মাধ্যমেই নয়; বরং অনুগ্রহের মাধ্যমে
দান করুন।
আয়াতের তৃতীয়
নির্দেশ হচ্ছে মূর্খদের উপেক্ষা করা। যারা জাহেল বা মূর্খ তাদের কাছ থেকে আপনি দূরে
সরে থাকুন। এর মর্মার্থ, আপনি অত্যাচারের প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের সঙ্গে কল্যাণকর ও
সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন এবং একান্ত কোমলতার সঙ্গে তাদের সত্য ও ন্যায়ের বিষয় বাতলে
দিন। কিন্তু বহু মূর্খ এমনও থাকে, যারা এমন ভদ্রোচিত আচরণে প্রভাবিত হয় না; বরং এ অবস্থায়ও
তারা মূর্খজনোচিত রূঢ় ব্যবহার করে। এমন লোকদের সঙ্গে আপনার আচরণ এমন হবে যে, তাদের
হৃদয়বিদারক মূর্খজনোচিত কথাবার্তায় দুঃখিত হয়ে তাদেরই মতো ব্যবহার আপনি করবেন না; বরং
তাদের থেকে দূরে সরে থাকবেন। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, দূরে সরে থাকার অর্থও মন্দের প্রত্যুত্তরে
মন্দ ব্যবহার না করা।
ক্ষমার মাধ্যমে
মানুষের পাপ মোচন করা হয়। যে ব্যক্তি অন্যকে ক্ষমা করে আল্লাহতায়ালা তার অপরাধ ক্ষমা
করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি তোমরা তাদের মার্জনা করো ও দোষত্রুটি উপেক্ষা করো ও ক্ষমা
করো, তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’ Ñসুরা তাগাবুন : ১৪
দুনিয়ায় কেউ কাউকে
ক্ষমা করলে আখেরাতে ক্ষমা মিলবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের ভুল ক্ষমা করবে, আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন
তার ভুল ক্ষমা করবেন। Ñইবনে মাজাহ : ২১৯৯