শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১১:৫৮ এএম
ভ্রমণ মানুষকে অনেক কিছু শেখায়, এর মাধ্যমে জ্ঞানের দুয়ার খোলে; ভিন্ন ভাষার ও সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সেতুবন্ধন গড়ে ওঠে। ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্রমণ একটি আনন্দময় ইবাদত এবং জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতার উৎস। ভ্রমণ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং তাদের পূর্ববর্তীদের কী পরিণাম হয়েছিল তা কি দেখে না? যারা মুত্তাকি তাদের জন্য পরলোকই শ্রেয়, তোমরা কি বোঝো না?’ -সুরা ইউসুফ : ১০৯
ভ্রমণের বিশেষ উদ্দেশ্য আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিরহস্য অবলোকন করে জ্ঞানার্জন এবং তার কুদরত ও শক্তির প্রতি অনুগত হওয়া। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনেও নির্দেশনা রয়েছেÑ ‘তারা দেশ ভ্রমণ করে না? তা হলে তারা জ্ঞানবুদ্ধি ও শ্রুতিশক্তিসম্পন্ন হতে পারত। বস্তুত চক্ষু তো অন্ধ নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে হৃদয়।’ -সুরা হজ : ৪৬
কুরআন মাজিদে তেরোবারের বেশি ভ্রমণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘তারা কি পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করেনি, যার ফলে তারা উপলব্ধিকারী হৃদয় ও শ্রবণকারী কানের অধিকারী হতো?’ -সুরা হজ : ৪৬
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা কুরআন মাজিদ বোঝার পূর্বশর্ত হিসেবে ভ্রমণের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কুরআন মাজিদের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেÑ ‘(হে নবী) তাদের বলো, পৃথিবীর বুকে ভ্রমণ করো এবং দেখো তিনি কীভাবে সৃষ্টির সূচনা করেছেন, তারপর আল্লাহ (এসবকে) আবার জীবন দান করবেন। অবশ্যই আল্লাহ সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী।’ -সুরা আনকাবুত : ২০
শুধু এতটুকুই নয়, ভ্রমণকারীর যেন ইবাদত-বন্দেগিতে কষ্ট না হয়Ñ এজন্য ইসলামে ‘কসর’ বা চার রাকাতের নামাজ দুই রাকাত পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং রোজা না রেখে পরে কাজার বিধান দেওয়া হয়েছে। এমনকি ভ্রমণকারী অর্থকষ্টে যেন না ভোগে, তাই তাকে জাকাত দেওয়ারও হুকুম করা হয়েছে। আর কোনো কাজে এতটা সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ কারণে অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ বলেনÑ ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্রমণ কেবল বৈধ নির্দেশ নয়, বরং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইবাদত। ভ্রমণ করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব।
আল্লাহর রাসুল (সা.) ভ্রমণে সঙ্গী-সাথির সংখ্যা সম্পর্কেও নির্দেশনা দিয়েছেন। ‘একজন কিংবা দুজন সঙ্গীর চেয়ে তিনজন সঙ্গী অধিক উত্তম। তিনজনের ভ্রমণকে কাফেলা বলা হয়। একজন কিংবা দুজনের ওপর শয়তান প্রভাব বিস্তার করতে পারে, কিন্তু তিনজনের ওপর সম্ভব হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৫৯৮
ভ্রমণ কেবল মানুষকে নতুন কিছু দেখায় না, নিজেকে ও সঙ্গী-সাথিদের চিনতে সাহায্য করে। ভ্রমণের কারণে মানুষ ধৈর্যশীল হয়, সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। ভ্রমণের সবচেয়ে উপকারী দিক হলোÑ অভিজ্ঞতা। হজরত মোয়াবিয়া (রা.) বলেন, ‘অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রজ্ঞাবান হওয়া যায় না।’ ভ্রমণের অনেক নিয়মকানুন আছে, অবস্থা বুঝে নিয়মকানুন ভিন্ন হয়, সেগুলো মান্য করা। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা। ভ্রমণে বের হওয়ার আগে আল্লাহর রাসুল (সা.) দোয়া করতে বলেছেন।