ইসলামি চিন্তা
শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:২১ পিএম
আল কুরআনের ৯৭তম
সুরা জিলজাল। এ সুরায় কেয়ামতের শুরুতে পৃথিবীর চূড়ান্ত ভূমিকম্প এবং বিশ্বের শৃঙ্খলার
পতন সম্পর্কে বলা হয়েছে। জিলজাল অর্থ কম্পন এবং ভূমিকম্প, যা এ সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে। সুরা জিলজালে কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এবং প্রতিটি ভালোমন্দ
কর্মই সেদিন তাদের পার্থিব কৃতকর্মের ফল দেখতে পাবে।’
সুরা জিলজালের
তিনটি প্রধান বিষয়Ñ ১. কেয়ামতের শুরুর লক্ষণ ২. কেয়ামতের দিনে মানুষের কৃতকর্মের সাক্ষ্য
পৃথিবী দেবে এবং ৩. মানুষকে ভালোমন্দে ভাগ করা এবং প্রত্যেককেই দেওয়া হবে তাদের কাজের
পুরস্কার বা শাস্তি। এ ছাড়া এ সুরায় আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন বিচারের সঠিকতা, কঠোরতা
ও ন্যায্যতার ওপর জোর দিয়েছেন।
সুরার দ্বিতীয়
আয়াতে বলা হয়েছে, কেয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে একটি হলো এ ভূমিকম্পের কারণে পৃথিবী তার
বোঝা ছেড়ে দেবে। আর শেষ তিন আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষের আমল কেয়ামতের দিন দেহ আকারে প্রকাশ
পাবে। এর অর্থ, মানুষের কাজগুলো তার কাছে উপযুক্ত উপায়ে উপস্থাপন করা হবে এবং সেগুলো
দেখা মানুষের জন্য সুখ বা দুঃখের কারণ হবে।
সুরার সপ্তম ও
অষ্টম আয়াতে বলা হয়েছে, সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা সে দেখবে এবং কেউ অণু
পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তা-ও সে দেখবে।
ইসলাম বলে, প্রতিটি
সামান্যতম ও নগণ্যতম সৎকাজেরও একটি ওজন ও মূল্য রয়েছে এবং অনুরূপ অবস্থা অসৎ কাজেরও।
অসৎ কাজ যত ছোটই হোক না কেন অবশ্যই তার হিসাব হবে এবং তা কোনোক্রমেই উপেক্ষা করার মতো
নয়। তাই কোনো ছোট সৎকাজকে ছোট মনে করে ত্যাগ করা উচিত নয়। কারণ এ ধরনের অনেক সৎকাজ
মিলে আল্লাহর কাছে একটি অনেক বড় সৎকাজ গণ্য হতে পারে। অনুরূপভাবে কোনো ছোট ও নগণ্য
অসৎ কাজও না করা উচিত; কারণ এ ধরনের অনেক ছোট গুনা একত্র হয়ে একটি বিরাট গুনার স্তূপ
জমে উঠতে পারে।
হাদিসে হজরত রসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো, তা একটুকরো খেজুর দান করার বা একটি ভালো
কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন।’ Ñসহিহ বোখারি : ৬৫৪০
হজরত রসুলুল্লাহ
(সা.) আরও বলেছেন, ‘কোনো সৎকাজকেও সামান্য ও নগণ্য মনে কোরো না, যদিও তা কোনো পানি
পানেচ্ছু ব্যক্তির পাত্রে এক মগ পানি ঢেলে দেওয়াই হয় অথবা তোমার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে
হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাই হয়।’ Ñমুসনাদে আহমাদ : ৫/৬৩
অনুরূপভাবে হজরত
রসুলুল্লাহ (সা.) মেয়েদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘হে মুসলিম মেয়েরা! কোনো প্রতিবেশী তার
প্রতিবেশিনীর বাড়িতে কোনো জিনিস পাঠানোকে সামান্য ও নগণ্য মনে কোরো না, তা ছাগলের পায়ের
একটি খুর হলেও।’ Ñসহিহ বোখারি : ৬০১৭
নবী কারিম (সা.)
অন্যত্র বলেন, ‘হে আয়েশা! যেসব গুনাকে ছোট মনে করা হয়, সেগুলো থেকে দূরে থাকো। কারণ
আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ Ñমুসনাদে আহমাদ : ৬/৭০
হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘সাবধান! ছোট গুনাসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা কর। কারণ সেগুলো সব মানুষের ওপর একত্র হয়ে তাকে ধ্বংস করে দেবে।’ Ñমুসনাদে আহমাদ : ১/৪০২