ইসলামি চিন্তা
জহির উদ্দিন বাবর
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩ ০১:১৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত
প্রয়োজনীয়
মুহূর্তে রোগীকে রক্তদান
একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একজন
সুস্থ মানুষ তিন মাস অন্তর
অন্তর রক্ত দিতে
পারেন। কেউ রক্ত
না দিলে তা এমনিতেই নষ্ট
হয়ে যায়। ইসলামের
প্রেরণা অনুযায়ী যেকোনো
মানুষের ন্যূনতম উপকার
করলেও এর প্রতিদান
পাওয়া যায়। কেননা
কাউকে পথ দেখিয়ে
দেওয়া, বোঝা বহনে
সহযোগিতা, ভালো পরামর্শ
দিয়ে সহায়তাÑ
এ ধরনের বাহ্যত
ছোট ও তুচ্ছ
বিষয়েও অনেক বেশি
নেকি লাভের সুযোগ
রয়েছে। বিশেষ করে কারও বিপদাপদে
তার পাশে দাঁড়ানো, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া
অনেক সওয়াবের কাজ। কেউ অসুস্থ হলে তার শুশ্রূষার
তাগিদ ইসলামে গুরুত্বের
সঙ্গে করা হয়েছে। মানুষের
উপকার হিসেবে রক্তদান
করলে অনেক সওয়াব
মিলবে।
রক্তদানের
ব্যাপারে ইসলামে কোনো
বিধিনিষেধ নেই। তবে রক্ত বিক্রি
করা যাবে না। যদিও
কোনো মুমূর্ষু রোগীর
জন্য রক্ত কিনতে
বাধ্য হলে ক্রেতার
পাপ হবে না। কেউ স্বেচ্ছায় রক্তদান
করলে এর দ্বারা
একজন বিপদগ্রস্ত মানুষের
বা মুমূর্ষু রোগীর
জীবন যেমন বাঁচে, তেমনি রক্তদাতা
ও রক্তগ্রহীতার মধ্যে
গড়ে ওঠে রক্তের
বন্ধন। স্বেচ্ছায় রক্ত
দিলে শুধু অন্যের
জীবন বাঁচানো নয়, বরং নিজের
জীবনও ঝুঁকিমুক্ত রাখা
সম্ভব। বিপন্ন মানুষের
মহামূল্যবান জীবনের সর্বোচ্চ
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
পবিত্র কুরআনে ঘোষিত
হয়েছেÑ ‘আর কেউ কারও প্রাণ
রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর
সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে প্রাণে
রক্ষা করল
(সুরা মায়েদা : ৩২)।’
অনেক সময় প্রয়োজনীয়
গ্রুপের রক্তের অভাবে
মানুষের জীবন বিপন্ন
হওয়ার উপক্রম হয়। সেই মুহূর্তে মুমূর্ষু
মানুষের জন্য রক্তের
জোগান দেওয়া তাকে
নতুন জীবন দেওয়ারই
নামান্তর।
আল্লাহ
তায়ালা মানুষকে ক্ষমা
করে দেওয়ার জন্য
নানা বাহানা খোঁজেন। কাকে
কী কারণে ক্ষমা
করে দেবেন,
সেটা কেউ বলতে
পারি না। মৃত্যুপথযাত্রী
একটি পিপাসার্ত কুকুরকে
পানি পান করিয়ে
এক দেহ ব্যবসায়ী
নারী জান্নাতের অধিকারী
হয়েছেন বলে হাদিসে
উল্লেখ আছে। এর দ্বারা খুব সহজেই অনুমান
করা যায়,
সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ
তায়ালার প্রেম ও দরদ কত বেশি। আর আশরাফুল মাখলুকাত
মানুষকে রক্ত দিয়ে
বাঁচতে সাহায্য করলে
এর প্রতিদান যে অনেক বেশি
হবে সেটা বলার
অপেক্ষা রাখে না। এমনকি
স্বেচ্ছায় রক্তদান হতে পারে আমার-আপনার জান্নাতে
যাওয়ারও অসিলা। নবী করিম
(সা.) বলেছেন,
‘তোমাদের কেউ তার অপর ভাইয়ের
উপকার করতে সক্ষম
হলে সে যেন তা করে (মুসলিম শরিফ)।’
রক্তদানের চেয়ে বড় উপকার আর কী হতে পারে!
জটিল
অপারেশনসহ বিভিন্ন সময় রোগীর রক্তের
প্রয়োজন হয়। বিশেষ
করে বর্তমানে ডেঙ্গুর
প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে
বাড়ছে। হাসপাতালে ভর্তি
হওয়া অনেক ডেঙ্গু
রোগীরই রক্তের দরকার। এই অবস্থায় রক্তের
প্রয়োজন অনেক বেশি। সুস্থ, অধুমপায়ী,
নেশামুক্ত মানুষের রক্ত
পাওয়া অনেক ক্ষেত্রে
কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। রোগীর
স্বজনদের তখন বড় পেরেশানিতে পড়তে
হয়। স্বেচ্ছায় কারও
রক্তের প্রয়োজন পূরণ
করে দিলে পেরেশানি
দূর করে দেওয়ার
সওয়াব অবশ্যই মহান
আল্লাহ আমাদের দেবেন। নবীজি (সা.)
বলেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর
প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের
মালিক আল্লাহ তায়ালা
তোমাদের প্রতি সদয় হবেন
(তিরমিজি)।’
ইসলামের
বার্তা হলো মানুষ
মানুষের জন্য। বিপন্ন
মানবতার পাশে দাঁড়াতে
বলেছে ইসলাম। মুমূর্ষু
মানুষের জীবন রক্ষার
তাগিদ দেওয়া হয়েছে
প্রত্যেক মুসলমানকে। রক্তদানের
মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকেই
ইসলামের সেই নির্দেশনার
বাস্তবায়ন ঘটাতে পারি। রক্তদানে
যেহেতু কোনো ধর্মীয়
বিধিনিষেধ নেই,
তাই প্রত্যেকেরই মহৎ এই কাজে
এগিয়ে আসা উচিত। সমাজের
সবাই রক্তদানে সচেতন
হলে রক্তের কোনো
অভাব হওয়ার কথা নয়। এজন্য
রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে
রূপ দেওয়ার বিকল্প
নেই।
ইসলাম
রক্তদানকে উৎসাহিত করে। রক্ত
বিক্রি ইসলামে নিষিদ্ধ। শুধু
রক্ত নয়,
শরীরের কোনো অঙ্গই
বিক্রির অনুমতি নেই। কেননা
মানুষ এর কোনোটারই
মালিক নয়। তবে রক্তদানের মাধ্যমে
দাতার যেন কোনো
সমস্যা না হয়, সেদিকেও খেয়াল
রাখতে হবে। ইসলামে
অন্যের উপকারের কথা যেমন বলেছে
তেমনি নিজের সুস্থতার
প্রতিও খেয়াল রাখতে
বলেছে। কেননা সুস্থতা
অনেক বড় নেয়ামত। এজন্য
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী
রক্তদানে সক্ষম হলে সবার উচিত
মানবতার প্রয়োজনে এই মহৎকাজে এগিয়ে
আসা।