ইসলামী স্থাপত্য
আবদুল্লাহ আল-মামুন
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩ ১৮:৩৭ পিএম
প্রায়
৬৭৩ বছর আগে ইট,
চুন ও সুরকি
দিয়ে ফেনী সদর উপজেলার শর্শদী
ইউনিয়নে তৈরি করা হয়েছে ছয় গম্বুজের একটি
নান্দনিক মসজিদ। ইতিহাস
থেকে জানা যায়, বাংলায় প্রথম
স্বাধীন মুসলিম সালতানাতের
প্রতিষ্ঠাতা ফখরুদ্দীন মুবারক
শাহ বাংলার সুলতান
ছিলেন ১৩৩৮ থেকে
১৩৪৯ সাল পর্যন্ত। সোনারগাঁ
ছিল তার রাজধানী। বৃহত্তর
কুমিল্লা, নোয়াখালী,
সিলেট ও চট্টগ্রামের
পর তিনি ত্রিপুরা
ও আরাকান রাজ্য
জয় করেন। শাসনকার্যের
সুবিধার্থে এতদঞ্চলে দ্বিতীয়
রাজধানী প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন
দেখা দিলে তিনি
ফেনী জেলার শর্শদীতে
স্থাপন করেন রাজ্যের
দ্বিতীয় রাজধানী। স্থানীয়
ধর্মপ্রাণ মানুষের ইবাদতের
জন্য আজ থেকে
সাড়ে ছয়শ বছরেরও
বেশি সময় আগে তিনি নিজ নামে ইট, পাথর ও সুরকি দিয়ে
ছয় গম্বুজের নান্দনিক
এ স্থাপনাটি নির্মাণ
করান। সুলতানি স্থাপত্যরীতির
সুন্দর এ কাঠামোতে
শত শত বছর ধরে ধর্মপ্রাণ
মুসলমানরা এখানে নামাজ
আদায় করছেন।
১৬ শতক জায়গার
ওপর নির্মিত মসজিদটির
গায়ে ইটের ওপর খাঁজ কেটে
কেটে নকশা তৈরি
করা হয়েছে। লতাপাতা
অঙ্কন করা হয়েছে
সুনিপুণ হাতে। গম্বুজের
নিচে রয়েছে শৈল্পিক
আবহ। কারুকার্যময় মসজিদের
ওপরে রয়েছে ছয়টি
গম্বুজ। পুরো মসজিদটি
চুন, সুরকি আর ইটের তৈরি। দুর্গের
আদলে নির্মিত মসজিদের
দেয়ালের পুরুত্ব প্রায়
পাঁচ ফুট। প্রত্নতত্ত্ব
অধিদপ্তরের অধীনে মসজিদটি
বর্তমানে পুরাকীর্তি সংরক্ষিত
এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। মসজিদের
সামনে দিয়ে চলে গেছে ঢাকা
থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত
ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ সড়ক। সড়কের
পূর্ব দিকে রয়েছে ‘কল্লা শাহর’ মাজার নামে
একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটারও
কোনো নামফলক বা ইতিহাস লেখা
নেই। মাজার থেকে
১০০ গজ দূরে
রয়েছে ত্রিপুরার রাজা
প্রতাপ মানিক্য কর্তৃক
খননকৃত মহামানিক্যের দীঘি।
২০০৯
সাল থেকে মসজিদে
ইমামের দায়িত্ব পালন
করা হোসাইন আহম্মদ
বলেন, সুলতান ফখরুদ্দীন
মুবারক শাহ মসজিদটির
প্রতিষ্ঠাতা। শর্শদী ছিল তার দ্বিতীয়
রাজধানী। দেশবিদেশ থেকে
অনেকে মসজিদটি দেখতে
আসেন উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি
সদস্য মোরশেদ আলম বলেন,
মসজিদটি আমাদের এলাকার
গৌরব। শর্শদী ইউনিয়ন
পরিষদ চেয়ারম্যান জানে
আলম ভূঞা ঐতিহাসিক
মসজিদটিকে খুবই সুন্দর
উল্লেখ করে বলেন, প্রাচীন এই মসজিদটি মুসলিম
শাসক ফখরুদ্দীন মুবারক
শাহের স্মৃতি ধারণ
করে রয়েছে।
ফখরুদ্দীন
মুবারক শাহ তার শাসনামলে ইসলামিক
সংস্কৃতির আদলে বহু স্থানে বহু স্থাপনা নির্মাণ
করেছিলেন। কালের আবর্তে
আজ সবই বিলীন
হওয়ার পথে। শর্শদীর
মসজিদটি এ অঞ্চলের
মানুষের কাছে স্মৃতি। এ স্মৃতি সংরক্ষণের
দাবি জানিয়ে অবসরপ্রাপ্ত
প্রধান শিক্ষক আলী হায়দার বলেন, ফখরুদ্দীন মুবারক
শাহ মসজিদ এখন কালের সাক্ষী। এটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য
সরকারের পাশাপাশি সবাইকে
এগিয়ে আসতে হবে।
প্রত্নতত্ত্ব
বিভাগ কুমিল্লা অঞ্চলের
পরিচালক এ কে এম সাইফুর
রহমান মসজিদটি সংরক্ষণে
সরকারের আন্তরিকতার কথা জানিয়ে বলেন, পুরাকীর্তি হিসেবে
সংরক্ষিত স্থাপনাটির রক্ষণাবেক্ষণে
প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ
গ্রহণ করা হবে।