শাহীন হাসনাত
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:২৮ এএম
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৪১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
সমাজে বসবাস করতে গেলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের মধ্যে কখনও কখনও পারস্পরিক ভুল-বোঝাবুঝি, মন-কষাকষি বা বিবাদ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ অবস্থায় তৃতীয় একটি পক্ষকে এগিয়ে এসে তাদের মধ্যকার ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দিতে হবে। এটা মুসলমানের ইমানি দায়িত্ব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।’ সুরা হুজুরাত : ১০
বিবাদ মীমাংসার বিষয়টিতে ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও সদকার চেয়ে উত্তম মর্যাদাকর বিষয় সম্পর্কে খবর দেব না? সাহাবিরা বলেন, অবশ্যই আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, বিবদমান বিষয়ে মীমাংসা করা।’ সুনানে আবু দাউদ : ৪৯১৯
সামান্য ভুলভ্রান্তির কারণে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই বিবাদ মীমাংসার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ যেমন যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছেন, তেমন হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ঝগড়া-বিবাদ নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনে যৎসামান্য মিথ্যা বলারও অনুমতি দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেয়, সে মিথ্যাবাদী নয়। বস্তুত সে ভালো কথা বলে এবং উত্তম কথাই আদানপ্রদান করে।’ সহিহ বোখারি : ২৬৯২
পবিত্র কুরআনে অশান্তিময় দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো পারস্পরিক আপস নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আর আপস নিষ্পত্তিই উত্তম...।’ সুরা নিসা : ১২৮
যেকোনো ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে মীমাংসা না করে শুধু শুধু বিদ্বেষ ও ক্ষোভ পুষে রাখা এবং সম্পর্ক ছিন্ন করা প্রকৃত মুমিনের কাজ হতে পারে না। এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে না, এমন সবাইকে মাফ করে দেওয়া হয়। তবে ওই দুই ব্যক্তি ছাড়া, যারা পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ করে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়, পরস্পর মিলে যাওয়া পর্যন্ত এদের বিষয়টি মওকুফ রাখো (তিনবার)।’ সহিহ মুসলিম : ২৫৬৫
কখনও কখনও ঝগড়া-বিবাদ এতটাই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে যে এর আপস নিষ্পত্তি নিজেদের সক্ষমতার বাইরে চলে যায়। একে অন্যের চেহারা দেখলেই গায়ে জ্বালা ধরে। এ ক্ষেত্রে মান্যবর কর্তাব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে এবং তাদের মধ্যে মীমাংসার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। কিন্তু দান-সদকা, সৎ কাজ অথবা মানুষের মাঝে আপস করার নির্দেশ দেওয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। আর যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এ কাজ করবে আমি তাকে অতি শিগগির মহা প্রতিদান দান করব।’ সুরা নিসা : ১১৪
সমঝোতার মাধ্যমে দুটি বিবদমান দল পারস্পরিক ভুলভ্রান্তি নিরসন করে ভাই-ভাই হয়ে যায়। এর পথ ধরে পরিবার ও সমাজে শান্তি নেমে আসে। মীমাংসা করতে গিয়ে কোনো ধরনের বাড়াবাড়ি করবে না, বরং এ ক্ষেত্রে পূর্ণরূপে ইনসাফের পরিচয় দেবে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুসলিমদের দুটি দল আত্মকলহে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। এরপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তবে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যে সময় পর্যন্ত না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দিও এবং (প্রতিটি বিষয়ে) ইনসাফ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’ সুরা হুজরাত : ৯