সাফা আক্তার নোলক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৬:১৯ পিএম
বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যোগ করা কথাসাহিত্যিক ও লেখক হুমায়ূন আহমেদের রোমান্টিক উপন্যাস ‘বৃষ্টি বিলাস’। বইয়ের নাম শুনে হয়তো মনে হতে পারে বর্ষার আবেগ, বৃষ্টিকে ঘিরে নানা কল্পনা কিংবা লেখকের বৃষ্টিকে ঘিরে কোনো অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ এই বই। তবে বৃষ্টি ঘিরে কোনো ইতিবাচক কল্পনার প্রকাশই দেখা যায়নি এই উপন্যাসে।
বরং বৃষ্টিকে ঘিরেও যে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা জমা হতে পারে মানুষের মাঝে, সেই অভিজ্ঞতাগুলোকে বয়ে নিতে হয় সারা জীবন। কখনও অগোচর করতে হয় সমাজ কিংবা নিজের থেকে, তারই বর্ণনা দেখা গেছে এই উপন্যাসটিতে।
উপন্যাসটির প্রতিটি চরিত্রই যেন ভিন্ন ভিন্ন কিছু রূপের উপাখ্যান দিচ্ছে। এই যেমন শামা- বেশ দুরন্ত মানসিকতার এক প্রতিচ্ছবি। আরেকটি চরিত্র এশা, যে শামার ছোট বোন। সে নিজেকে খুব বুদ্ধিমতী মনে করে। জীবনে চলার প্রতিটি ধাপ খুব বুঝে নেয় সে। আবার নিজের বুদ্ধির সমালোচনা করে বলে, অতি চালাকের গলায় দড়ি। উপন্যাসের আরেক চরিত্র শামার বাড়িওয়ালা মুত্তালিব চাচা। যে শামার জন্য কিছু করতে চান, কিন্তু আবার ভয় পান। কারণ সে তার জীবনে বেশি জিনিসই হারিয়ে ফেলে। এর সঙ্গে রয়েছে শামার মা সুলতানা, বাবা আবদুর রহমান আর ভাই মন্টু। উপন্যাসের এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র আতাউর। যাকে শামা মজা করে ডাকে খাতাউর বলে। বেশ কয়েক দিন যার জন্য শামা নিজেকে বলত জমিদারের বউ। কারণ এই আতাউরের সঙ্গেই শামার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে। বিয়ের ব্যাপারে শামা প্রথমে কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও আনমনে চিন্তা করতে থাকে। নিজের দুরন্ত মন নিয়ে মজাও করতে থাকে আতাউরের সঙ্গে। কিন্তু কয়েক দিন পর তার এমন অজানা চিন্তায় এক ব্যাঘাত এসে পড়ে। শামার বাবা খোঁজ পায় আতাউরের এক বিরল অসুখের। যার কারণে শামার বিয়েটি ভেঙে দেন তার বাবা।
অসুখের কথা কেন লুকানো হয়েছিল? উপন্যাসের নামকরণ যেন আতাউরের এই বিরল অসুখকে ঘিরে। বৃষ্টিকে চিন্তা করে মানুষ যেমন আনন্দ পায় কিংবা উচ্ছ্বসিত হয়, আতাউরের ক্ষেত্রে তা যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। ছোটবেলায় বৃষ্টির সময় ঘটে যাওয়া এক ঘটনার তিক্ত স্মৃতি সে আজও বয়ে নিয়ে বেরাচ্ছে। তাই আজও বর্ষাকালের শুরুর বৃষ্টি তার মধ্যে তৈরি করে এই অসুখ। তালাবদ্ধ করে রাখতে হয় তাকে এক ঘরের মধ্যে। অসুখ সারলে সে ভুলে যায় পূর্বের সব স্মৃতি। তার এই অসুখ চিকিৎসায় ঠিক হয় না। বরং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই বাড়তে থাকে।
উপন্যাসের শেষ দিকটায় শামা যেন বেশ দ্বিধায় পড়ে যায়। যার কারণ অসুখের পূর্বে আতাউরের একটি চিঠি। রাতে শামার বিয়ের কথা ছিল আশফাকুরের সঙ্গে। কিন্তু সেদিন শামা রওনা হয় আতাউরের ঠিকানায়। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে, শামার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। আর মনে মনে সে নিয়েছে এক সিদ্ধান্ত। শামার কথা মতে, মেয়ে মানুষ যখন কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়; ঠিক তখনই নাকি চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
বৃষ্টি বিলাস উপন্যাসটির শেষে কোনো নির্ধারিত সিদ্ধান্তের রূপ দেখা যায়নি। বরং কয়েক দিনের পরিচিত আতাউরের প্রতি শামার ছুটে চলাই যেন উপন্যাসের সমাপ্তি।