রাতুল মুন্সী
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩ ১৪:৩৬ পিএম
গল্প, কাহিনী ও কথার জাদুকর নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিজেকে নানাভাবে খুঁজেছেন পরিবেশ-প্রকৃতি ও নির্জনতার মধ্যে। তিনি সৃষ্টি করেছেন বাকের ভাই, মিসির আলী, হিমুসহ অদ্ভুত সব চরিত্রের।
তার উপন্যাস নীল অপরাজিতায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অদ্ভুত এক চরিত্র লেখক শওকত সাহেব। নিজেকে নিয়ে তার ভাবনা, স্ত্রীর থেকে দূরত্ব ও মেয়ের মৃত্যু। সবকিছু থেকে দূরে থাকতে ১৫ দিনের জন্য তিনি চলে আসেন বন্ধু মহলের মহাকবি বজলুর রহমানের এলাকায়। শওকত সাহেব শহরের অট্টালিকায় বড় হয়েছেন। তিনি অনেক দিন যাবৎ লেখেন। গ্রাম ও শহর থেকে কয়েকশ মাইল দূরেও পৌঁছে গেছে তার লেখার যশ ও খ্যাতি। প্রথম দিকে তিনি যখন লিখতেন তখন তার একমাত্র সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী রেনু। বর্তমানে তার খ্যাতি চারদিকে, কিন্তু আগের মতো স্ত্রীকে সঙ্গী হিসেবে কাছে পান না। বাসায় এসে দেখেন স্ত্রী বাচ্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রথমবার তার স্ত্রী যখন সন্তান প্রসব করলেন তখন তার প্রথম বই বের হবে। প্রকাশকের দোকানে সারা দিন বসে থেকে সেলাইসহ আঠা মাখানো কাঁচা বই নিয়ে তিনি হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন। স্ত্রীর বিছানার কাছে গিয়ে দেখেন পাশে বাচ্চা। সেদিন তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। বরং তার স্ত্রী বলেছিলেন, দেখি কী বই লিখেছ, পড়ে দেখি।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিখতে পারছেন না। কয়েক দিন কোথাও একা থাকার চিন্তা করলেন তিনি। এর মধ্যে লেখক মহলের মহাকবি বজলুর রহমান তার গ্রামে ঘুরে আসতে বারবার অনুরোধ করলেন। তার গ্রামে সোহাগী নদী, জমিদার বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা। বাড়ির সামনে কদমগাছের সারি। বৃষ্টির সময় ব্যাঙের ডাক, রাতে ঝিঁঝি পোকার শব্দ। বাড়িতে বসে বৃষ্টিসহ নদী দেখা। এসব গল্প দিয়ে শওকত সাহেবের মন নরম করে তুললেন বজলুর রহমান।
শওকত সাহেব যখন বাসা থেকে বের হয়েছেন, কিছুদিন নির্জনে মহাকবি বজলুর রহমানের এলাকায় থাকবেন, তখন বজলুর রহমান শুনালেন আরেক গল্প। তার গ্রামে নাকি সোহাগী নামে কোনো নদী নেই। সবাই নাকি সেই নদীকে ছোট গাঙ নামে চিনে। যেই গল্প শুনে শুনে শওকত সাহেবের মন নরম হয়েছিল। আজ আবার নতুন গল্প শুনে তার মন ভেঙে গেল। তবুও তিনি যাত্রা করলেন মহাকবির গ্রামের উদ্দেশে। তিনি মনে মনে ধরে নিলেন গ্রামে গিয়ে আরও খারাপ কিছু দেখতে হবে। এসে ঠিকই তেমন কিছু দেখতে হলো তাকে। নির্জনে আর থাকা হলো না। গ্রামের মানুষ, স্থানীয় ওসিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মন রাখতে তার ব্যস্ততা আরও বেড়ে গেল। স্কুল মাস্টার মোফাজ্জল করিম সাহেব এবং মেয়ে পুষ্পের খেদমত বেশি অসহ্য লাগছিল তার। কিন্তু কিছুদিন পর তা সয়ে গেল। এখন গ্রামের রাত, বৃষ্টি, ব্যাঙের ডাক, ঝিঁঝি পোকার শব্দ ভালো লাগতে শুরু করেছে। শেষের দিকে কিছুদিন ওসির ভাড়া করে দেওয়া বজরায় করে তিনি বৃষ্টিবিলাস করলেন। পুষ্প ও তার বাবা স্কুলমাস্টার মোফাজ্জল করিম তাকে নিতে এলেও তিনি বাড়িতে গেলেন না।
প্রচণ্ড বৃষ্টি শুরু হলো। শওকত সাহেব সেই বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলেন। পুষ্প ও মোফাজ্জল সাহেব তাকে বাড়িতে নিতে না পেরে ব্যর্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন।