ইমাম মেহেদী
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৬ পিএম
আষাঢ় মাসের প্রথম বৃষ্টি। প্রথম দিন বলা যেতে পারে। কারণ বৃষ্টির মৌসুম শুরু হলো। অবশ্য দুদিন ধরেই মেঘলা আকাশ। রাস্তাঘাটে পানি জমেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় প্রবেশ করতেই একজোড়া পা নজর কাড়ল শুভর।
মেয়েটির এক পায়ে কালো রঙের পায়েল। রাস্তা পার হওয়ার সময় বোরকা খানিকটা উঁচু করতেই একজোড়া নগ্ন পায়ের সঙ্গে চোখের মিলন হলো শুভর। সাদা ফর্সা রঙের মেয়েটির মুখে মাস্ক। বয়স বাইশ কিংবা তেইশ হবে। চোখ আর হাত-পা ছাড়া পুরো শরীর বোরকায় ঢাকা।
শুভর দৃষ্টি কোনোভাবেই মেয়েটি থেকে সরছে না। রাস্তা পার হয়ে ক্যাম্পাসের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করল মেয়েটি। শুভ মেয়েটির পিছু পিছু হাঁটছে আর ভাবছেÑ একটি মেয়ের পা এত সুন্দর হতে পারে! দুটি পায়ের মেলবন্ধন এত দৃষ্টিনন্দন হতে পারে। আহ্, এত জাদুকরী পা! এ যেন সৌন্দর্যের বৃষ্টি, এগিয়ে যাচ্ছে স্বর্গরাজ্যের দিকে।
তার পিছনে হাঁটতে দেখে মেয়েটি একবার শুভর দিকে ফিরে তাকায়। আবার সামনে চলতে থাকে। ক্যাম্পাসের শত শত মেয়ের মধ্যেও সেই মেয়েটি শুভর দৃষ্টি এড়ায় না। তার শারীরিক উচ্চতা, গঠন-গড়ন, বয়স কোনোকিছুই শুভকে আকৃষ্ট করে না। শুধু একজোড়া পায়ের নেশায় মগ্ন হয়ে ছুটছে শুভ।
শুভ মেয়েটির পিছু ছাড়ে না। এবার সে একাডেমিক ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে। মেয়েটি কোথাও না তাকিয়ে সোজা তৃতীয় তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে। শুভর গন্তব্য এবার থেমে যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা ১২টা বাজে। মনে পড়ে যায় এখন তার ক্লাসের সময়। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করে বলে আর ভাবেÑ কেন ছুটছি, কার জন্যে ছুটছি? মেয়েটি কে, কোনো কিছুই তো জানি না। তাহলে কেন আমি তার পিছনে ছুটছি?
শুভ নিচে নেমে এসে বারান্দায় দাঁড়ায়। নানা শিহরণ তার ভেতর মাথাচাড়া দেয়। কিন্তু একজোড়া পা সে ভুলতে পারছে না। মেয়েটির বাঁ পায়ে পায়েল আর ডান পা খালি। শুভর চোখে ভেসে ওঠে অবিরাম বৃষ্টির রাশি রাশি জলের সঙ্গে দুটি পা যেন মৃদু নন্দতত্ত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।
ক্লাস শেষে শুভ একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এই পথ দিয়ে ফিরে আসবে মেয়েটি। নিশ্চয়ই আসবে, মাত্র ৪৫ মিনিটের ক্লাস শেষে মেয়েটি বের হয়ে আসবে। কিন্তু অপেক্ষার সময় এবার যন্ত্রণাদায়ক হয় শুভর জন্য। বারবার ঘড়ি দেখে, কিন্তু সময় শেষ হয় না। প্রতিটা মিনিট যেন ঘণ্টার মতো লম্বা হতে থাকে। মাত্র ৪৫ মিনিট সময় এখন যেন ৪৫ ঘণ্টা মনে হচ্ছে। মেয়েটি এখনও বের হয় না কেন? তাহলে কি সে অন্যপাশ দিয়ে চলে গেছে? নাহ, তা কী করে হয়? যাওয়ার পথ তো একটাই। ক্লাস থেকে বের হওয়া প্রতিটি মেয়ের মুখ ও পায়ের দিকে এমনভাবে তাকায় শুভ- যেন বন্দুকের গুলি মিস হলেও তার দৃষ্টি না এড়ায়। অবশেষে মেয়েটি হেঁটে বের হয়। শুভর ভেতর অপেক্ষার প্রহর শেষে বিশ্বজয়ের উত্তেজনার শিহরণ জাগে। ক্লাস থেকে বের হয়ে হাঁটতে থাকে মেয়েটি। একজোড়া পায়ের পিছু হাঁটতে থাকে শুভ। চোখ তার ওই একজোড়া জাদুকরী পায়ের দিকে। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে মেয়েটি রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়ায়। শুভ হতভম্ব হয়ে কথা বলে- এই যে শুনুন! মেয়েটি এবার মিষ্টি হেসে রিকশায় উঠতে উঠতে বলে, আপনি আমার না- আমার পায়ের প্রেমে পড়েছেন!