মেহেদী হাসান নাঈম
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩ ১৬:৩৪ পিএম
আষাঢ়ের মেঘমল্লার নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির বর্ষা। বৃষ্টির জলধারায় নাকে আসে মাটির সোঁদা গন্ধ। বাঙালির মনন আর বৈচিত্র্যকে নানা ব্যঞ্জনায় ভরিয়ে তোলে বর্ষা। বৃষ্টি মানে গ্রীষ্মের মলিন জীর্ণতাকে মুছে দিয়ে প্রকৃতিকে গাঢ় সবুজের সমারোহে সাজিয়ে দেওয়া।
কিন্তু শহরের যান্ত্রিক জীবনে মন খুলে বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখা খানিকটা বিলাসিতা। তবে এখনও শহুরের মানবহৃদয় বিবর্ণ হয়ে যায়নি। বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখা মানুষের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়। তাই বৃষ্টি হলেই তারা নেমে পড়ে ভিজতে। বৃষ্টির প্রেমে সিক্ত হয়ে হৃদয়ে রঙ মাখে। গানের কথার মতো-
এই মেঘলা দিনে একলা / ঘরে থাকে না তো মন,
কাছে যাবো কবে পাবো / ওগো তোমার নিমন্ত্রণ?
বর্ষা তৃষিত হৃদয়ে, পুষ্প-পল্লব আর বৃক্ষরাজিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। বৃষ্টির অঝোর ধারা প্রকৃতিকে সাজায় নতুন রূপে। সজীব হয়ে ওঠে ফসলের মাঠ। উর্বর হয় ভূমি। কৃষিতে আসে নতুন প্রাণ। বর্ষা নির্জনে তাড়িত করে। প্ররোচিত করে বিরহে। আনন্দ, বেদনা আর বিরহকাতরতায় মন হয়ে ওঠে সিক্ত। বর্ষার ভিন্নচিত্র দেখা যায় গ্রামীণ জীবনে। কুঁড়েঘরে যখন বৃষ্টির আগমন ঘটে- টিনের চালের ছিদ্র দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ে। মায়েরা তখন ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেই ছিদ্রের নিচে হাঁড়ি-জাতীয় কিছু দিতে- যেন ক্ষতি না হয় কুঁড়েঘর নামক সেই রাজপ্রাসাদের।
বর্ষা যেমন আনন্দ নিয়ে আসে, তেমনি আবার দুর্ভোগ আনে মানুষের জীবনে। অনবরত বৃষ্টিতে সাধারণ জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ভাটা পড়ে বৃষ্টি উপভোগের তীব্র ইচ্ছা। তবে ইট-পাথরের নগরীতে কিছু মানুষ থাকে বৃষ্টি উপভোগ করার মতো। যারা প্রিয় মানুষটির হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে। কিংবা শত ব্যস্ততা ভুলে বৃষ্টিভেজা রাস্তায় রিকশায় ঘুরতে।
বৃষ্টি প্রেম ও স্নিগ্ধতার। মানবহৃদয়ে এত ভালোবাসা যাকে ঘিরে, সেই বর্ষা ঋতুই হারাচ্ছে সৌন্দর্য। প্রকৃতিতে এখন বর্ষা আসে দেরি করে। জলবায়ু পরিবর্তনসহ যে কারণগুলো এর জন্য দায়ী, তা এই বৃষ্টিপ্রেমী মানুষ দ্বারাই সৃষ্ট। এ জন্য আমাদের সবার সচেতন হতে হবে; প্রকৃতি আবার ফিরে পাবে তার আপন রূপ। বৃষ্টিতে ভিজে সিক্ত হবে প্রতিটি হৃদয়।